উড়ন্ত নদীর
প্রভাবে
বিপর্যস্ত
মানব সভ্যতা!
প্রকৃতি
সবসময়ই বিস্ময়কর, এর অসীম রহস্যময়তা
আমাদের চেতনায় কল্পনার ডানা মেলে। "উড়ন্ত নদী" শব্দটি আমাদের মনে যে চিত্র ফুটিয়ে
তোলে, তা এক অপার
সৌন্দর্যের প্রতীক। আমাদের ভাবনায় এক অপূর্ব চিত্র
আঁকে—যেখানে নদী মাটির পরিবর্তে আকাশে প্রবাহিত হচ্ছে। কিন্তু
এর ফলস্বরূপ যে বিপর্যয় ঘটতে
পারে, যেমন অতিবৃষ্টি, ভূমিধস এবং বন্য ইত্যাদি । এখানে আমরা
আলোচনা করব কিভাবে এই বিপর্যয়গুলো ঘটে
এবং এর মোকাবিলা করার
উপায়গুলো।
প্রযুক্তিতে অভো
এল৬০
স্টাইলিশ
গাড়ির
চমক!
উড়ন্ত নদীর সৃষ্টি ও প্রবাহ: -
বিশ্বের
বিভিন্ন অঞ্চলে তীব্র বন্যা দেখা দিচ্ছে। সাম্প্রতিক বাংলাদেশ, চীন ও কানাডার ভয়াবহ
বন্যার কারণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা বলছেন ,দ্রুত উষ্ণ হয়ে উঠতে থাকা বায়ুমণ্ডলে আগের চেয়ে অনেক বেশি আর্দ্রতা ধারণ করছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ
খবর জানিয়েছে।
২০২৩
সালের এপ্রিলে ইরাক, ইরান, কুয়েত ও জর্ডান—প্রতিটি
দেশে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছিল। সাথে ছিল তীব্র বজ্রপাত, শিলাবৃষ্টি এবং অতিমাত্রায় বৃষ্টিপাত। আবহাওয়াবিদেরা ওই সব অঞ্চলের
আকাশ বা বায়ুমণ্ডলে রেকর্ড
পরিমাণ আর্দ্রতার উপস্থিতি লক্ষ করেন বলে জানিয়েছিল।
ওই
বছরের জুলাই মাসেই চিলিতে মাত্র তিন দিনে ৫০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল। এমন প্রবল বৃষ্টিপাতে আন্দিজ পর্বতের কিছু অংশের তুষারও গলে যাওয়ায় ব্যাপক বন্যা দেখা দেয়। দেশটির রাস্তাঘাট, সেতু এবং পানি সরবরাহব্যবস্থা সব ধ্বংস হয়ে
যায়।
উড়ন্ত নদীর
গবেষণায়
বিজ্ঞানীদের
অভিমত:
-
বিজ্ঞানীরা
বলছেন, বায়ুমণ্ডলীয় বা ভাসমান নদীগুলোর
কারণে অতিবৃষ্টি ভূমিধস ও বন্যা সৃষ্টি
হচ্ছে। এসব নদী ক্রমেই তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। নাসার তথ্যমতে, বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলো প্রতিনিয়ত দীর্ঘ, প্রশস্ত এবং ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠছে। বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মানুষকে বন্যার ঝুঁকিতে ফেলছে।
উড়ন্ত নদীর
সৃষ্টি
ও
আকার:
-
"উড়ন্ত
নদী" যখন আমাদের কল্পনায় আসে, তখন আমরা ভেবে দেখি নদী মেঘের সঙ্গে মিশে উড়ে যাচ্ছে। বাস্তবে যখন মেঘে জলকণা জমা হয়, তখন তা ভারী হয়ে
বর্ষার আকার নেয়। ‘ভাসমান নদী বা ‘উড়ন্ত নদী’হলো ভূপৃষ্ঠ থেকে বায়ুমণ্ডল পর্যন্ত লম্বা ও প্রশস্ত জলীয়বাষ্পের
স্তর। এসব নদীর সৃষ্টি বা উদ্ভব হয়
সাধারণত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চল থেকে। পরে তাঁরা ঠান্ডা মেরু অঞ্চলের দিকে সরতে থাকে। এই উড়ন্ত নদীগুলো
পৃথিবীর মধ্য-অক্ষাংশজুড়ে চলাচল করা মোট জলীয়বাষ্পের প্রায় ৯০ শতাংশ বহন
করে।
একটি
বায়ুমণ্ডলীয় নদী সাধারণত গড়ে প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ, ৫০০ কিলোমিটার প্রশস্ত এবং প্রায় তিন কিলোমিটার গভীর হয়ে থাকে। যদিও এই নদীগুলো ক্রমেই
দীর্ঘ ও প্রশস্ত হচ্ছে।
অনেক সময় এ নদী পাঁচ
হাজার কিলোমিটারের চেয়েও বেশি প্রশস্ত হয়ে থাকে। তবুও, মানুষ এই নদী চোখে
দেখতে পায় না। তাঁরা দেখে পায় শুধুই কিছু পুঞ্জিভূত মেঘ।
নাসার
জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরির বায়ুমণ্ডলীয় গবেষক ব্রায়ান কান বলেছেন, এই নদীর অস্তিত্ব
ইনফ্রারেড এবং মাইক্রোওয়েভ ফ্রিকোয়েন্সি দিয়ে দেখতে হয়। তাই বিশ্বজুড়ে জলীয় বাষ্প এবং বায়ুমণ্ডলীয় নদী পর্যবেক্ষণের জন্য স্যাটেলাইট বেশ কার্যকর।
উত্তর
আমেরিকার দীর্ঘতম নদী মিসিসিপি যতোটা না আর্দ্রতা ছড়ায়
তার চেয়ে ১৫ গুণ বেশি
আর্দ্রতা ছড়াতে পারে বায়ুমণ্ডলের বিশাল ও শক্তিশালী নদীগুলো।
এই উড়ন্ত নদীগুলো যে পরিমাণ পানি
নিঃসরণ করে—তা বিশ্বের সবচেয়ে
বড় নদী আমাজনের নিয়মিত পানি প্রবাহের প্রায় দ্বিগুণ।
বিমানবন্দরে রাডার প্রযুক্তি-উন্নয়নের মাইলফলক
বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলো
ভূপৃষ্ঠে
বিপর্যয়ের
কারণ:
-
বিজ্ঞানীরা
বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বেশি জলীয়বাষ্প তৈরি মাত্রা বাড়িয়েছে, যা পরিস্থিতি জটিল
করে তুলছে। অল্প সময়ের মধ্যে ভূপৃষ্ঠে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। দেখা দিচ্ছে বিপর্যয়কর বন্যা ও ভূমিধস।
গবেষণা: -
গবেষণায়
দেখা গেছে, ১৯৬০ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী বায়ুমণ্ডলীয় জলীয়বাষ্প ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে তা ক্রমেই বেড়ে
চলেছে। জার্মানির পটসডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব জিওসায়েন্সের সাম্প্রতিক
গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দক্ষিণ আমেরিকা, উত্তর আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলো দীর্ঘ সময় ধরে অবস্থান করছে। এর অর্থ, হচ্ছে
সামনের দিনগুলোতে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত হবে এবং জনজীবনের ওপর ব্যাপক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে।
সংযুক্ত
আরব আমিরাতের খলিফা ইউনিভার্সিটির আরেকটি সমীক্ষা অনুসারে, ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ঠিক এমনটাই হয়েছিল। সমীক্ষায় বলা হয়, হাই-রেজল্যুশন সিমুলেশনের মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলো দৃশ্যমান হয়েছে। এই নদীগুলো উত্তর-পূর্ব আফ্রিকা থেকে পশ্চিম ইরানের দিকে দ্রুতগতিতে প্রবাহিত।
উড়ন্ত নদীর
অতিবৃষ্টির
প্রভাব:
-
অতিবৃষ্টির
ফলে নিম্নভূমিতে পানি জমে যায়, যা বিভিন্ন দুর্যোগের
কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অতিবৃষ্টি যে বিপর্যয়ের সৃষ্টি
করতে পারে, তার মধ্যে অন্যতম হলো: -
ভূমিধস: -
পাহাড়ি
অঞ্চলে অতিরিক্ত বৃষ্টির ফলে মাটির ক্ষয় হয়। যখন মাটি স্যাচুরেটেড হয়ে যায়, তখন তা স্থির থাকতে
পারে না। ফলস্বরূপ, মাটি বা পাথর নিচে
গড়িয়ে পড়ে, যা ভূমিধসের কারণ
হয়ে দাঁড়ায়।
বন্যা: -
নদীর
পানি যদি ধারণক্ষমতার উপরে চলে যায়, তাহলে তা আশেপাশের এলাকায়
ছড়িয়ে পড়ে। শহর ও গ্রামের অবকাঠামোর
উপর চাপ সৃষ্টি করে, ফলে বন্যার সৃষ্টি হয়।
হারানো মোবাইল উদ্ধারের উপায় কি?
প্রতিকার ও
সচেতনতা:
-
এই
বিপর্যয়গুলো মোকাবিলার জন্য আমাদের কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে: -
বন সংরক্ষণ:
-
গাছপালা
রক্ষা করা উচিত, কারণ এটি মাটির ক্ষয় কমাতে সাহায্য করে।
সঠিক নগর
পরিকল্পনা:
-
নদী
ও জলাশয়ের নিকটবর্তী অঞ্চলে নির্মাণ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
জলবিজ্ঞান ও
পরিবেশ
সংরক্ষণ:
-
নদী
ও মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা করার জন্য সঠিক গবেষণা এবং পরিকল্পনা জরুরি।
স্বাস্থ্যসেবায় সাশ্রয়ী, ও উন্নতির সুখবর!
উপসংহার: -
উড়ন্ত
নদীর মাধ্যমে প্রকৃতির বিপর্যয়ের বাস্তবতা আমাদের
সামনে আসে। অতিবৃষ্টি, ভূমিধস এবং বন্যা—এই সবই আমাদের
জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই আমাদের উচিত প্রকৃতির প্রতি সম্মান ও সচেতনতা বজায়
রাখা, যাতে আমরা এই বিপর্যয়গুলোর হাত
থেকে নিরাপদে থাকতে পারি। পরিবেশের সুরক্ষা এবং আমাদের উন্নয়ন একই সঙ্গে সম্ভব—এটি আমাদের অঙ্গীকার হতে হবে।
পোস্ট ট্যাগ
-
উড়ন্ত
নদী কি?, উড়ন্ত নদী বলতে কী বোঝো?, উড়ন্ত
নদীর প্রভাব, উড়ন্ত নদীর সৃষ্টি ও প্রবাহ, উড়ন্ত নদীর
গবেষণায় বিজ্ঞানীদের অভিমত