মানব জীবনে সুখের প্রত্যাশা প্রতিটি মানুষের। সবাই সুখের সন্ধানে ছুটোছুটি করে দিগ্বিবিদিক। জীবনের
সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা ও প্রত্যাশা -তার থাকবে একটি সুখের নীড় এবং সুখে ভরা সংসার। সুখ অনুসন্ধিৎসু মানুষগুলো বিভিন্নভাবে সুখের স্বাদ
পেতে চায়। মানব জীবনকে সুখী করতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন দাম্পত্য জীবনের বিধান দিয়েছেন। সংসারে সুখ আসবে কোন পথে, সংসার সুখী হবে কিসের
গুনে ইত্যকার গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা নিয়েই আজকের টপিক।
সুখী দম্পত্য
জীবন কাকে বলে?
অভিভাবকদের অনুমোদন- অনুমতি নিয়ে নারী- পুরুষ পরস্পরের পছন্দের আলোকে বিবাহিত জীবনে যা
কিছু পেয়েছে, তাতেই সন্তুষ্ট হয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলতে পারাকেই সুখী দম্পত্য জীবন বলে।
সুখী দম্পত্য
জীবনের টিপস সমূহ নিন্মরুপ : -
১) বিশ্বাস ও
ভালোবাসা: -
স্বামী–স্ত্রী দুজনকেই পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস রাখতে
হবে। উভয়কেই আস্থাভাজন হওয়া জরুরি। পরস্পরের মধ্যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সৃষ্টি হলে বিরূপ
প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে সমঝোতার মাধ্যমে সমাধান করুন। কারও ভুলত্রুটি হলে ক্ষমাসুন্দর
দৃষ্টিতে দেখা ও সঙ্গীর ভুল হলে সংশোধনের সুযোগ দিন।
২) পারস্পরিক
সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ: -
বিবাহিত জীবনে
স্বামী- স্ত্রীর বন্ধুত্ব, প্রেম ভালোবাসা,
কথা- বার্তা,আচার -ব্যবহারের মধ্যে যেন সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ প্রতীয়মান হয়। এর অভাব
হলে দাম্পত্য জীবনে অদৃশ্য দূরত্ব সৃষ্টি হয়,
যা পরস্পরের অজান্তে সম্পর্ককে বিষাক্ত করে তুলে।
৩) ইতিবাচক থাকুন:
-
দাম্পত্য জীবনে
সুখী হওয়ার অন্যতম উপায় হলো ইতিবাচক থাকা। যত বেশী ইতিবাচক চিন্তা করবেন, তত বেশি সুখী হবেন। সম্পর্কের
ক্ষেত্রে এই পদ্ধতির অনুসরণ করুন। জীবন সঙ্গীর
খুঁতগুলো খুঁজে বের না করে তার ভালো দিকগুলোর ব্যাপারে উৎসাহিত করুন।
ইউনিভার্সিটি অব ডেনভারের সেন্টার ফর ম্যারিটাল অ্যান্ড
ফ্যামিলি স্টাডিজের সহকারী পরিচালক হাওয়ার্ড মার্কম্যানের মতে "দাম্পত্য জীবনে
স্বামী-স্ত্রী উভয়ের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখাটা অপরিহার্য। হাস্যরস,
আনন্দ ভাগাভাগি ও সাংসারিক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা স্বামী–স্ত্রীর মধ্যকার সম্পর্ককে
আরও দৃঢ় ও মজবুত করে তোলে"।
৪) নিঃস্বার্থ
ভালোবাসা: -
ভিন্ন পরিবেশের
দু' জন মানুষের বিয়ের মাধ্যমে গড়ে উঠে দাম্পত্য জীবন। কিছু পাওয়ার প্রত্যাশা অনেক সময়
দুজনের মাঝে শূন্যতা সৃষ্টি করে। তাই প্রতিদানহীন ভালোবাসা জীবন সঙ্গীর মনে সঞ্চার করে অনন্য এক অনুভব।সঙ্গী অসুস্থ হলে শুশ্রূষা করা,
কাজের ফাঁকে খোঁজ নেওয়া, সঙ্গীর পছন্দের প্রতি আগ্রহ দেখানো দাম্পত্য জীবনকে অনেক মজবুত
ও সাবলীল করে।
৫) ভালো শ্রোতা
হওয়া : -
দাম্পত্যে জীবনে
সুখী হতে হলে ভালো শ্রোতা হওয়া খুব জরুরি। পরস্পরের আবেগ,অনুভূতি, ভালো লাগা,
খারাপ লাগা এবং পছন্দের বিষয় নিয়ে আলোচনায় ভালো শ্রোতা হলে সম্পর্ক আরও মধুর হয়।
৬) মতানৈক্য
দূরীকরণ : -
সংসার জীবনে ছোট–বড় অনেক বিষয়ে মতানৈক্য হতে পারে। সেসব
বিষয়কে ইস্যু করে নিজেদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করা নিছক নির্বুদ্ধিতা। রাগ না দেখিয়ে নমনীয়ভাবে পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল থেকে আলোচনা
করলে পারিবারিক সম্পর্ক সুখের হবে।
৭) বন্ধুত্বপূর্ণ
সম্পর্ক : -
দাম্পত্য জীবনে
নারী–পুরুষের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা বিশেষ প্রয়োজন। পরস্পরের মধ্যে যদি বন্ধুভাবাপন্ন সম্পর্ক না থাকে, তাহলে অনেক
বিষয়ে ভুল বোঝাবুঝি ও অমীমাংসিত থেকে যায়,যা
পরে দূরত্বের সৃষ্টি করে পরিবারে অশান্তি ও
ভাঙ্গন সৃষ্টি করে।
৮) পরস্পরকে
অভিবাদন জানানো: -
প্রশংসা পেলে
মানুষ আরও ভালো কিছু করার প্রেরণা পায়। যে কোনো সাফল্য অর্জনে স্বামী-স্ত্রী
পরস্পরকে অভিবাদন ও উৎসাহ দেবে। এতে সংসার জীবনে দুজনের মধ্যে নির্ভরতা ও ঘনিষ্ঠতা
আরও বাড়বে।
৯) ঘুরতে যাওয়া:
-
সময় সুযোগ মত
দুজন মিলে মাঝে মাঝে দূরে কোথাও বেড়াতে যাওয়া প্রয়োজন । বেড়ানো বা একসঙ্গে
বাহিরে খাওয়া দাওয়া জীবনে ভিন্নমাত্রা যোগ
করে। ব্যস্ততার মাঝেও সময় বের করে ডেটিং করা দাম্পত্য জীবনে অনাবিল আনন্দ বয়ে আনে।
১০) উৎকৃষ্ট
অন্তরঙ্গতা ও স্পর্শ : -
সঙ্গীর সাথে নিয়মিত উৎকৃষ্ট অন্তরঙ্গতা এবং স্পর্শ, দাম্পত্য জীবনকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে । উপভোগ্য ও সুন্দর সময়
কাটানোর পর দুজনের মধ্যে প্রবাহিত হয় আনন্দের ফল্গুধারা । দাম্পত্য জীবনকে সুন্দর ও আকর্ষনীয় করতে স্পর্শ ও নিয়মিত শারীরিক সম্পর্কের প্রয়োজনীয়তা
অনস্বীকার্য।
১১) চাহিদা পূরণ
: -
মানুষের জীবনে অনেক কিছুরই চাহিদা থাকে। সমর্থ্য অনুযায়ী
সেই চাহিদা পূরণ করা অপরিহার্য। স্বামী - স্ত্রী পরস্পরের চাহিদার প্রতি যত্নশীল হলে
সুখে দাম্পত্য জীবন গড়ে উঠবে।
১২) পরিবারকে
গুরুত্ব দিন: -
বিভিন্ন কারণে অনেকেই পরিবারকে যথাযথ মূল্যায়ন ও গুরুত্ব
দিতে ব্যর্থতার পরিচয় দেন। এতে সংসার জীবন সুখী হওয়ার পরিবর্তে বিষময় হয়ে ওঠে।
অন্য কাউকে নয় নিজ পরিবারকেই গুরুত্ব দিলে সুখী দাম্পত্য জীবন গড়ে উঠবে।
১৩) সিদ্ধান্তকে
সম্মান জানান: -
জীবনের প্রয়োজনে অনেক সময় অনেক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে
হয়। স্থান কাল পাত্র ও গুরত্ব বিবেচনায় পরস্পরের মতামত এবং সিদ্ধান্তকে সম্মান জানানো
আবশ্যক। পরামর্শ গ্রহণের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং গৃহীত সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান প্রদর্শন সুখী দাম্পত্য
জীবনের সোপান।
১৪) সচেতনতা
অবলম্বন : -
দাম্পত্য সম্পর্কে পরস্পরের কাছে আস্থাভাজন হওয়া জরুরি। মতপার্থক্য , ভুল–বুঝাবুঝি,
অসহিষ্ণুতা, রুক্ষ মেজাজ,ঝগড়াঝাটি নানা কারণে
সুন্দর দাম্পত্য জীবনে ঘটতে পারে ছন্দপতন।
যৌবন থেকে দুনিয়ার জীবনের শেষ পর্যন্ত জীবনসঙ্গীর সাথে সুখ- দুঃখ, হাসি–আনন্দের
সাথে পথ চলতে হলে পরস্পরের কিছু বিষয় সচেতনভাবে হ্যান্ডেলিং করতে হয়।
উপসংহার : -
প্রত্যেক মানুষেরই চিন্তাভাবনার নিজস্ব একটা
জগৎ থাকে। তাই একসঙ্গে সময় কাটানোর ফাঁকে ফাঁকে সঙ্গীকে মাঝে মাঝে ‘স্পেস’ দিলে
সম্পর্কে বৈচিত্র্য ও সৌন্দর্য আসে। সুখী দাম্পত্য জীবনের উৎকৃষ্ট মডেল রাসুলের (সাঃ)
দাম্পত্য জীবন।তাঁর দাম্পত্য জীবনের আঙ্গিকে
সংসার সাজাতে পারলে প্রত্যেকটি সংশয় হবে এক একটি জান্নাতের বাগান।
পোস্ট ট্যাগ
-
সুখী দাম্পত্য জীবন pdf , দাম্পত্য জীবন সুখী হোক , সুখী
দাম্পত্য জীবন বই , দাম্পত্য জীবনের সমস্যা , দাম্পত্য জীবন নিয়ে স্ট্যাটাস , দাম্পত্য
জীবনে সুখী হওয়ার উপায় , দাম্পত্য জীবন কি , দাম্পত্য জীবনে অসুখী