ভোট মানুষের
সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক অধিকার। গণতান্ত্রিক নির্বাচনের সৌন্দর্য হচ্ছে প্রতিটি
নাগরিক তার স্বাধীন মত ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারা । যখন এ অধিকার থেকে রাষ্ট্রের
নাগরিকদের বঞ্চিত করা হয় তখন গণতন্ত্রের পরিবর্তে একনায়কতন্ত্র বা ফ্যাসিবাদের ভূত
চেপে বসে সবার ঘাড়ে। স্বাধীনতার মূলমন্ত্র ‘গণতন্ত্র’কে প্রস্ফুটিত করার লক্ষ্যে
রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের বাধাহীন ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা একটি সভ্য সমাজের
অপরিহার্য কর্তব্য।
ইসলামের দৃষ্টিতে
ভোট কী?
ইসলামের দৃষ্টিতে ভোট হচ্ছে তিনটি বিষয়ের সমষ্টি। যথা: -
১) সাক্ষ্য প্রদান
২) সুপারিশ ও
৩) প্রতিনিধিত্বের সনদ প্রদান।
অর্থাৎ- কোন ব্যক্তি বা প্রার্থীকে ভোট দেওয়া মানে হলো সে প্রার্থী ভালো এবং যোগ্য বলে আপনি সাক্ষ্য দিচ্ছেন। তিনি ভালো এবং যোগ্য বলে আপনি সুপারিশ করছেন। তিনি ভালো এবং যোগ্য বলে আপনি তাকে প্রতিনিধিত্বের বৈধতার সনদ প্রদান করছেন।
সমাজে ভোটের
গুরুত্ব : -
সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা, নীতি-নৈতিকতা ও বিচার- সালিশে
ন্যায় ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের উপর।
একজন সচেতন ও নীতিবান মানুষ সমাজের জন্য খুবই
গুরুত্বপূর্ণ। আধুনিক রাষ্ট্রে যোগ্য ও আদর্শবান মানুষ নির্বাচিত হলে এবং সততার ভিত্তিতে সমাজ -রাষ্ট্র পরিচালনা করলে সকল
শ্রেণীর মানুষ সুখে- শান্তিতে বসবাস করতে পারে।
তাই আমেজপূর্ণ আনন্দঘন পরিবেশে আগ্রহী সকলের অংশ গ্রহনে ভোট গ্রহন অত্যাবশ্যক।
ভোট দেয়া কেন প্রয়োজন?
কলুষিত সমাজ
ব্যবস্থার নির্বাচন নিয়ে হাজারো সমস্যা পরিলক্ষিত হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই
গালমন্দ, গীবত-শেকায়েত, নিজের প্রশংসায় পঞ্চমুখ, ক্ষমতায় যাওয়ার হাতিয়ার,
আধিপত্য অর্জন ও জনগণকে শোষণ করার মাধ্যম হিসাবে
ব্যবহার করা হয়।
তারপর ও ভোট আপনার নাগরিক অধিকার। যেহেতু দেশের শাসনব্যবস্থা খেলাফত ভিত্তিক নয়। চাইলেও তা হুট করে ফিরিয়ে আনা সম্ভব না। গণতন্ত্র ও নির্বাচন পদ্ধতির হাজারো ত্রুটি সত্বেও, ইসলামী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা- প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই আমাদেরকে নির্বাচনে
অংশ গ্রহন এবং ভোট দেয়া প্রয়োজন।
আল্লাদ্রোহী,ইসলামের দুশমন, রাষ্ট্র ও জনস্বার্থ-বিরোধী
অসৎ ব্যক্তি বা প্রার্থীর বিজয় ঠেকানোর প্রচেষ্টা করে মন্দের ভালো কে ভোট দেয়া প্রয়োজন।
ভোট বা সাক্ষ্য
প্রদানে আল্লাহর নির্দেশ:-
ভোট যেহেতু সাক্ষ্য
প্রদান তাই ভালো লোকের পক্ষে সাক্ষ্য দেওয়া উচিত।
আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, "তোমরা সাক্ষ্য গোপন
করো না। যে সাক্ষ্য গোপন করবে, তার অন্তর পাপপূর্ণ হবে। তোমরা যাই কিছু করনা কেন আল্লাহ তাআলা সে সম্পর্কে জ্ঞাত।
(সূরা বাকারা-২৮৩)
কাকে ভোট দেয়া
উচিত?
সৎ, যোগ্য ও আদর্শবান প্রার্থীকে ভোট দেয়া উচিত। প্রচার মাইকে তো সবাই সেরা এবং ফুলের মত পবিত্র চরিত্রের স্লোগান শোনা
যায়। প্রকৃত পক্ষে সেরা এবং চরিত্রবান কে?
এর মানদণ্ডইবা কী? এর সংক্ষিপ্ত
উত্তর হলো- শরিয়তে ইসলামিয়ার দৃষ্টিতে যে ভালো
এবং যোগ্য বলবে তাকেই ভোট দিতে হবে।
শরিয়তে ইসলামিয়ার মাপ কাঠিতে প্রকৃতপক্ষে শতভাগ ভালো এবং যোগ্য প্রার্থী পাওয়া
বর্তমানে অনেকটা দুঃসাধ্যই হয়ে পড়েছে। বিশেষত
নৈতিক ও চারিত্রিক অবক্ষয়ের প্রতিযোগিতার এ যুগে সমাজের হাতেগোণা স্বল্প একটা
অংশ ছাড়া, ভালো এবং যোগ্য লোক খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন। আর যারা আছেন তারাও পরিবেশ পরিস্থিতির
নাজুকতায় নির্বাচনে স্বতঃস্ফূর্ত অংশ গ্রহনে স্বাচ্ছন্দবোধও করেন না। তাই মন্দের ভালো
কে ভোট দেয়া উচিত।
দেশের নির্বাচন
ব্যবস্থার চিত্র : -
দেশের নির্বাচনীব্যবস্থা অকার্যকর, একতরফা, সহিংসতা ও
অপসংস্কৃতির করাল গ্রাসে নিমজ্জিত । রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব, ক্ষমতাসন ও নির্বাচন কমিশনের
ব্যর্থতার পরিচয় দেশকে বিচ্ছিন্ন ও অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করছে। সহিংসতা ও প্রাণহানির
ঘটনা সমাজের শান্তি শৃঙ্খলা কে স্বমূলে ধ্বংস করে দিচ্ছে।
মানুষের অধিকার
হরণের শাস্তি : -
মানুষের ভোটাধিকার ও মৌলিক অধিকার হরণ করা হারাম। যে মানুষকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করবে,
তার ভয়াবহ শাস্তির কথা কোরআনে বর্ণিত রয়েছে।
আল্লাহ তা’আলা
এরশাদ করেন-
﴿وَلَا تَحۡسَبَنَّ اللّٰهَ غَافِلاً عَمَّا يَعۡمَلُ الظّٰلِمُوۡنَ ؕ اِنَّمَا يُؤَخِّرُهُمۡ لِيَوۡمٍ تَشۡخَصُ فِيۡهِ الۡاَبۡصَارُۙ﴾
অর্থাৎ- এ জালেমরা যা কিছু করছে আল্লাহকে তা থেকে গাফেল মনে করো না। আল্লাহ তো তাদেরকে সময় দিচ্ছেন সেই দিন পর্যন্ত যখন তাদের চক্ষু বিস্ফোরিত হয়ে যাবে।
﴿ مُهۡطِعِيۡنَ مُقۡنِعِىۡ رُءُوۡسِهِمۡ لَا يَرۡتَدُّ اِلَيۡهِمۡ طَرۡفُهُمۡۚ وَاَفۡـِٕدَتُهُمۡ هَوَآءٌؕ﴾
তারা মাথা তুলে পালাতে থাকবে, দৃষ্টি ওপরের দিকে স্থির
হয়ে থাকবে এবং মন উড়তে থাকবে।
সূরা ইবরাহীম,
আয়াত ৪২-৪৩
জালিমরা যা কিছু করে সে বিষয়ে আল্লাহ উদাসীন নন। সে দিন তাদের চক্ষু হবে স্থির,ভীত-বিহ্বল চিত্তে উপরের
দিকে তাকিয়ে তারা ছুটোছুটি করবে, নিজেদের প্রতি তাদের দৃষ্টি ফিরবে না এবং তাদের অন্তর
হবে উদাস।
জালিমদের শেষ
পরিণতি : -
জালিমদের শেষ পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। অত্যাচারীদের উপর আল্লাহর শাস্তি বিরতিহীন ভাবে আসবে।আল্লাহ ছাড় দেন, ছেড়ে
দেন না। শাসনকালের একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষেই
আল্লাহ জালিমদের শেষ পরিণতি মর্মন্তুদ শাস্তির বিধানও রেখেছেন।
উপসংহার :-
নির্বাচন এখন সাধারণ মানুষের কাছে আতঙ্ক, পরিহাস, দুর্বৃত্ত ও সন্ত্রাসীদের ক্ষমতা
প্রদর্শনের মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। নির্বাচনে কোনো রাজনীতি নেই। আছে ক্ষমতাসীন ও নির্বাচন
কমিশনে হালুয়া রুটির ভাগা- ভাগি। এমুহূর্তে দেশকে বাঁচাতে হলে প্রয়োজন,সকলের অংশ গ্রহনে
প্রতিনিধিত্ব মূলক,সুষ্ঠ-সুন্দর,উৎসাহ মুখর,দেশে-বিদেশে গ্রহন যোগ্য একটি নির্বাচন
আয়োজন করা।
আল্লাহ আমাদের দেশে একটি সুন্দর, সুষ্ঠু,আনন্দ ঘন,নিরপেক্ষ,
অংশগ্রহণ মুলক ও সকলের নিকট গ্রহন যোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে শান্তি দান করুন,আমিন।
পোস্ট ট্যাগ
-
ভোট দানের অধিকার কি ধরনের অধিকার , ভোট দেওয়ার অধিকার
গুরুত্বপূর্ণ কারণ , ভোট আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার , ভোটাধিকার আইন , বাংলাদেশের সরকার
গঠনের জন্য নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা ও পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করো , ভোট দেওয়া কোন
ধরনের কর্তব্য , বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য , ভোটের কিছু কথা