সালাত ত্যাগকারীর পরিণতি - ঈমান আনার পর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো সালাত( নামাজ)।
ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের মধ্যে সালাত (নামাজ) দ্বিতীয়। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত কায়েম
করা ফরজ। আল্লাহর ওপর ঈমান আনার পর সর্বপ্রথম করণীয় আমল সালাত। এটি মুসলমান ও কাফেরের
মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টিকারী বাহ্যিক আমল। সালাত (নামাজ) পরিত্যাগকারী কাফেরের সমতুল্য।
কুরআনে সালাত
শব্দের ব্যবহার : -
পবিত্র কালামে হাকিমে প্রায় ১০০ বার সালাত শব্দের ব্যবহার
করা হয়েছে। এর মধ্যে -
১) ৮৫ বার (ইসম) নাম বা বিশেষ্য হিসেবে এবং
২) ১৫ বার (ফেয়েল) ক্রিয়াপদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
সালাত ত্যাগের
গুনাহ: -
দুঃখজনক হলেও সত্য,
বর্তমান সমাজের অসংখ্য মুসলমান সালাত ত্যাগের ভয়াবহ গুনাহে লিপ্ত। আল্লাহর রাসুলের (সা.) দৃষ্টিতে
সালাত (নামাজ) ত্যাগকারী দুনিয়াতে অভিশপ্ত এবং
আখিরাতে কঠিন শাস্তি পাবে। হাশরের কঠিন পরিস্থিতিতে সর্বপ্রথম বান্দাকে সালাতের (নামাজের)
হিসাব দিতে হবে।
মুসলিমের আবশ্যকীয়
বিধান : -
বিবেকবান,সুস্থ
মুসলমানকে সালাত(নামাজ) অবশ্যই পড়তে
হবে। দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে, ইশারায়—যে কোন অবস্থায় সালাত (নামাজ)পড়তেই হবে। একজন মুমিন
ঘরে-বাইরে, পথে-ঘাটে, দেশে-বিদেশে, সাগরে-মহাকাশে যেখানেই অবস্থান করুক না কেন তাকে
সালাত (নামাজ) পড়তেই হবে।
সালাাত বর্জনকারী
জাহান্নামী, কারণ?: -
নামাজ না পড়লে
পরকালে নিশ্চিত ভাবে জাহান্নামে যেতে
হবে,কারণ? পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘(জাহান্নামিদের জিজ্ঞাসা করা হবে) তোমাদের কোন জিনিস
সাকারে (জাহান্নাম) নিক্ষেপ করেছে? তারা বলবে, আমরা সালাত আদায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত
ছিলাম না।
﴿
مَا سَلَكَكُمۡ فِىۡ سَقَرَ﴾
কিসে তোমাদের দোযখে নিক্ষেপ করলো?
﴿
قَالُوۡا لَمۡ نَكُ مِنَ
الۡمُصَلِّيۡنَۙ﴾
তারা বলবেঃ আমরা
নামায পড়তাম না।
-সুরা : মুদ্দাসসির,
আয়াত : ৪২-৪৩
সালাত ত্যাগকারী বেনামাজিকে কিয়ামতের দিন জাহান্নামের
গভীর গর্তে নিক্ষেপ করা হবে।
জীবনও বরকতশূন্য
হয়ে যায়: -
আবদুল্লাহ ইবনে
ওমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তির আসরের সালাত কাজা হয় তার পরিবার-পরিজন
ও ধন-সম্পদ সবই যেন ধ্বংস হয়ে গেল।
মুসলিম, হাদিস
: ১৩০৪
কিয়ামতের দিন
লাঞ্চনাকর শাস্তি :
কিয়ামতের দিন
বেনামাজি সর্বপ্রথম যে অপদস্থতা ও লাঞ্ছনার শিকার হবে, কোরআনের একটি আয়াতে তার বিবরণ
এসেছে, যার মর্ম নিম্নরূপ :‘স্মরণ করো সেদিনের কথা, যেদিন পায়ের গোছা উন্মোচন করা হবে।
সেদিন তাদের আহ্বান করা হবে সিজদা করার জন্য, কিন্তু তারা সক্ষম হবে না। তাদের দৃষ্টি
অবনত, হীনতা তাদের আচ্ছন্ন করবে। অথচ যখন তারা নিরাপদ ছিল, তখন তো তাদের আহ্বান করা
হয়েছিল সিজদা করতে।
আল্লাহ বলেন
: -
﴿يَوۡمَ
يُكۡشَفُ عَنۡ سَاقٍ وَّيُدۡعَوۡنَ
اِلَى السُّجُوۡدِ فَلَا يَسۡتَطِيۡعُوۡنَۙ﴾
অর্থাৎ- যেদিন কঠিন সময় এসে পড়বে এবং সিজদা করার জন্য
লোকদেরকে ডাকা হবে। কিন্তু তারা সিজদা করতে সক্ষম হবে না।
সুরা : কালাম, আয়াত : ৪২
﴿
خَاشِعَةً اَبۡصَارُهُمۡ تَرۡهَقُهُمۡ ذِلَّةٌۚ وَّقَدۡ
كَانُوۡا يُدۡعَوۡنَ اِلَى السُّجُوۡدِ وَهُمۡ
سٰلِمُوۡنَ﴾
অনুবাদ -তাদের দৃষ্টি হবে অবনত। হীনতা ও অপমানবোধ তাদেরকে
আচ্ছন্ন করে ফেলবে। এর আগে যখন তারা সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলো তখন সিজদার জন্য তাদেরকে
ডাকা হতো (কিন্তু তারা অস্বীকৃতি জানাতো)।
সুরা : কালাম, আয়াত :৪৩
সালাত দ্বিনের
গুরুত্বপূর্ণ বিধান : -
নামাজ ত্যাগ কারীর ঈমান খুুবই দুর্বল। নামাজ না পড়াকে
মহানবী (সা.) কুফরি কাজ ও কাফিরের স্বভাব বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। হাদিসে রাসূল
(সা.) বলেন, "যার ভিতরে নামাজ নেই, তার ভিতরে দ্বিনের কোনো হিস্যা নেই।
-মুসনাদে বাজ্জার,
হাদিস : ৮৫৩৯
সালাত মুমিন
ও কাফিরের পার্থক্যকারী :
নামাজের মাধ্যমে ঈমান ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হয়। জাবির
(রা.) বলেন, আমি নবী (সা.)-কে বলতে শুনেছি, বান্দা এবং শিরক -কুফরের মধ্যে পার্থক্য
হচ্ছে সালাত। যে ইচ্ছাকৃত সালাত ছেড়ে দিলো সে কফরি করলো।
-মুসলিম, হাদিস : ১৪৮
সালাত পরকালে
মুক্তির উপায়: -
বুরাইদা (রা.)
বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, আমাদের ও তাদের (কাফিরদের) মধ্যে (মুক্তির)
যে প্রতিশ্রুতি আছে তা হলো সালাত(নামাজ)। সুতরাং যে ব্যক্তি নামাজ ছেড়ে দেয়, সে কুফরি
কাজ করে।
-তিরমিজি, হাদিস
: ২৬২১
এ হাদিসের একটি ব্যাখ্যা হলো, যখন কেউ ইচ্ছাৃত নামাজ
ছেড়ে দেয়, তখন সে যেন কুফরের সঙ্গে গিয়ে মিলিত হয়। আর নামাজ না পড়াটা কুফরি কাজের সমতুল্য।
নামাজ না পড়া কুফরিসদৃশ কাজ। তবে সালাত ত্যাগ কারীকে সরাসরি কাফির বলা যাবে কি না,এ
বিষয়ে আলেমদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে।
সালাত পরকালে
মুক্তির উপায় :
নামাজ পড়তে পারাটা সৌভাগ্যের বিষয়! আর না পড়তে পারা বড়ই দুর্ভাগ্যের বিষয়!
হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি
নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত সালাত (নামাজ) যত্নের সঙ্গে আদায় করবে, কিয়ামতের দিন এ নামাজ তার
জন্য আলো,ঈমান ও ইসলামের দলিল হবে এবং তার নাজাতের অসিলা হবে। আর যে গুরুত্বের সঙ্গে
নিয়মিত নামাজ আদায় করবে না, কিয়ামতের বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে নামাজ তার জন্য (আলো)
নূর হবে না। দলিলও হবে না এমন কি সে আজাব থেকে মুক্তিও পাবে না।
-মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৬৫৭৬
উপসংহার : -
রাসূল সাল্লেল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময়ে নামাজ
ত্যাগকারীদের মুসলমান মনে করা হত না।এ কারণে মুনাফেকরাও সালাতের জামাতে উপস্থিত হতো।
নামধারী মুসলিমদের ভয়াবহ পরিণতির কথা চিন্তা করে এখনই তাওবা করে সঠিক ভাবে সালাত আদায়ে
অভ্যস্ত হওয়া প্রয়োজন। আল্লাহ আমাদের সঠিক ভাবে সালাত আদায়ের তাওফিক দান করুন, আমীন।
পোস্ট ট্যাগ
-
সালাত পরিত্যাগকারীর বিধান pdf , সালাত আদায় না করার
পরিণতি , সালাত ত্যাগকারী কাফের , সালাত আত তাহরীক , আত তাহরীক ফতোয়া হটলাইন , যৌবন
কালের একটি সিজদা বৃদ্ধ বয়সে ৮০ বছরের ইবাদতের সমান , প্রবন্ধ সমূহ আত তাহরীক , নামাজ
না পড়ার শাস্তি আত তাহরীক