অপরুপ চিত্তাকর্ষক কাশ্মীর - কাশ্মীর হল অত্যাশ্চর্য
প্রাকৃতিক ল্যান্ডস্কেপ। তুষারাবৃত পর্বত, সবুজ তৃণভূমি, সুন্দর হ্রদ এবং মনোমুগ্ধকর
জলপ্রপাত ও চিত্তাকর্ষক পর্যটন ভূমি।
প্রতি বছরই দেশ - বিদেশের অনেক ভ্রমণ পিপাসুরা এই স্বর্গরাজ্য
কাশ্মীরে ছুটে যায় এর অপার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে।
জীবনকে আনন্দ দায়ক, আলোকিত ও উপভোগ্য করার জন্য কাশ্মীরের কিছু জনপ্রিয় পর্যটন স্থানের তালিকা
দেয়া হলো।
কাশ্মীরের দর্শনীয়
স্থান: -
কাশ্মীরের পুরো শহরটাই যেন স্বর্গ রাজ্য, দিগন্ত জোড়া
উঁচু উঁচু পাহাড়ের মাঝে সাদা বরফের মেলা। রাজ্যের ভিতরে ও বাহিরে রয়েছে অপার সৌন্দর্য হাতছানি।
১) শ্রীনগর
: -
শ্রীনগরে প্রবেশ
করলেই দৃষ্টি আকর্ষণ করবে পাহাড়ের চূড়ায়
বরফের মতো সাদা তুষার কনা। সেখানে রয়েছে-
১) মোঘল গার্ডেন,
২) টিউলিপ গার্ডেন,
৩) হযরত বাল মসজিদ,
৪) ডাল লেক ও
নাগিন লেক।
৫) আরডাল লেকের ভাসমান শহরও ভালো লাগার মতো। গাড়ি ভাড়া করে সারাদিনের জন্য শ্রীনগর শহর টা দেখলে
ভালো লাগবে।
২) গুলমার্গ
: -
শ্রীনগর থেকে মাত্র ৫২ কিলো দূরে সবুজ ঘাসে বিস্তৃত গুলমার্গ,
এটি সারা বছরই বরফে ঢাকা থাকে। এখানে দেখতে পারবেন-
১) গন্ডোলা,
২) গলফ কোর্স,
৩) ঋষির মাজার,
৩) আফারওয়াত পিক,
৪) সেন্ট ম্যারি চার্চ। ক্যাবল কার ছাড়াও প্যারাগ্লাইডিং
এর আনন্দ পাবেন গুলমার্গে।
৩) পেহেলগাম
: -
জুলাই থেকে অক্টোবরের মাঝে পেহেলগামে দেখা মিলবে রাস্তার দু'ধারে আপেল বাগানের
মনোরম দৃশ্যের। শ্রীনগর থেকে ৯৭ কিলো দূরে ট্যাক্সি করে যেতে পারবেন এ স্থানে । একটু
সময় নিয়ে ঘুরলে ভালো ভাবে দেখতে পারবেন আরো
অনেক কিছু, যেমনঃ -
১) লিদার নদী,
২) বেতাব ভ্যালি,
৩) চান্দেরওয়ারি,
৪) আরু ভ্যালি,
৫)ধাবিয়ান,
৬) কাশ্মীর ভ্যালী পয়েন্ট,
৬) কানিমার্গ।
ঘোড়ায় বসে
ঘুরে বেড়াবার আনন্দ পাবেন পেগেলহাম ভিউ পয়েন্টে।
এখানকার মিনি সুইজারল্যান্ড খ্যাত বাইসারানে
পাবেন এক্সটা মজা।
৪) সোনামার্গ
: -
শ্রীনগর থেকে
৪২ কিলো দূরে দেখা মিলবে সুন্দর উপত্যকা ও ঝর্ণার সোনামার্গে। এখানে রয়েছে -
১) থাজিয়ান
হিমবাহ।
২) সিন্ধু নদী,
৩) স্লেজিং,
স্নো বাইক
ও ঘোড়ায় চড়ার সুযোগ পাবেন এখানে।
• কাশ্মীরে শহর
থেকে একটু দূরে ভালো লাগা ও দেখর মতো অনেক জায়গাই রয়েছে।
যেমন –
১) শহর কোকেরনাগ ,
২) রয়েছে মাছ ধরার ব্যবস্থা।
৩) ছটপলে রয়েছে
কাঠ বাদাম ও আপেল বাগানের সমাহার।
৪) নুব্রা উপাতাক্য ও
৫) দুধপতরির মতো জায়গায়।
কাশ্মীর ভ্রমণ
কখন বেশি আনন্দের? : -
রূপে অন্যান্য কাশ্মীর বছরের যেকোনো সময়ই ভ্রমণ পিপাসুদের
ভালো লাগার মতো একটি জায়গা। তবে কিছু বিশেষ সময়ে কাশ্মীরের সৌন্দর্য বিশেষ ভাবে আকর্ষণ
করে পর্যটকদের ।
গ্রীষ্মকাল
: -
(এপ্রিল -মে) এ সময়টাকে কাশ্মীরে যাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় মনে করা হয়। এ সময়ে ফুলে ভরা থাকে চারদিক, বিশেষ করে টিউলিপ
ফুলের সৌন্দর্য মুগ্ধ করে পর্যটকদের।
শরৎকাল : - ( সেপ্টেম্বর - অক্টোবর)এ সময়ে বরফ কিছুটা কম থাকে। নানা ধরনের ফল-বিশেষ করে আপেল এবং চীনা বাদামের
দেখা মিলবে এই সময়ে।
শীতকাল : -
(ডিসেম্বর- ফেব্রুয়ারি) এ সময়ে কাশ্মীরে চারিদিকে
শুধু বরফ আর বরফ,সাথে স্নোফল। এ মৌসূমে কাশ্মীরে
গেলে চারপাশে এক অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্য চোখে পড়বে।
সতর্কতা : -
শীতকালে ভ্রমণের ক্ষেত্রে বাড়তি সাবধানতার প্রয়োজন রয়েছে।
কাশ্মীরে কিভাবে
যাবেন ?
প্লেনে, ট্রেনে বা বাসে করে কাশ্মীর যেতে পারেন।
১) বিমান: -
বিমানে যাওয়ার
ক্ষেত্রে ঢাকা থেকে প্রথমে দিল্লি, তারপর সেখান থেকে শ্রীনগর। শ্রীনগর থেকে গাড়িতে
করে পৌঁছে যাবেন কাশ্মীর।
২) ট্রেন:)
ট্রেনে যাবার ক্ষেত্রে প্রথমে ঢাকা থেকে মৈত্রী এক্সপ্রেসপ
চড়ে কলকাতা নামতে হবে। তারপর সেখান থেকে ৩৫-৩৬ ঘণ্টা সফর করে ‘জম্বু’ যেতে হবে। কলকাতা
থেকে জম্বু যাওয়ার জন্য “হিমগিরি” ও “জম্বু তাওয়াই” নামের দুইটি ট্রেন রয়েছে। সপ্তাহে
তিনদিন ( মঙ্গল, শুক্র আর শনিবার) রাত ১১.৫০ মিনিটে কলকাতার হাওড়া থেকে জম্বুর উদ্দ্যেশে
রওনা দেয় হিমগিরি ট্রেনটি।এবং তাওয়াই প্রতিদিনই
যাতায়াত করে হাওরা টু জম্বু, তবে সময় বেশি লাগে। তাড়াহুড়া না থাকলে হিমগিরিতে যাওয়াই
ভালো। এরপর জম্বু থেকে ৮-১০ ঘণ্টার সফর করে শ্রীনগর যেতে হবে। শ্রীনগর থেকে গাড়িতে
করে পৌঁছে যাবেন স্বপ্নের শহর কাশ্মীরে।
৩) বাস : -
বাসে প্রথমে গ্রিনলাইন, সোহাগ বা শ্যামলি পরিবহনে কলকাতা
থেকে জম্বু গিয়ে সেখান থেকে শ্রীনগরে পৌঁছে গাড়িতে করে কাশ্মীরে যেতে হবে।
ইচ্ছা করলে“ডোমেস্টিক বিমানে”ও কলকাতা থেকে জম্বু অথবা
শ্রীনগরে যেতে পারেন। তবে সেই ক্ষেত্রে ভাড়া একটু বেশি হবে।
কাশ্মীরে কোথায়
থাকবেন?
কাশ্মীরে থাকার জন্য বেশকিছু হোটেল পাবেন। শ্রীনগর ও জম্বুতেও থাকার জন্য
আছে বেশ কিছু হোটেল, রিসোর্ট ও হাউজ বোট। এর মধ্যে -
১) হোটেল জামরুদ,
২)হোটেল জাহাঙ্গীর,
৩) গ্র্যান্ড
হোটেল উল্লেখযোগ্য।
রুম হিসেবে ভাড়া
১২০০-২৫০০ এর মধ্যে দুই জনের জন্য।
ভালো টুরিস্ট
এরিয়ায় থাকতে চাইলে শ্রীনগরের ডাল লেকের
পাশে রয়েছে বেশ কিছু হাউস বোট। যেমন-
১)প্রিন্স অফ
ভ্যালে,
২)ইয়ং মর্নিং
স্টার,
৩)নিউজিল্যান্ড
হাউস বোট ।
এ ক্ষেত্রে
খরচ অন্যান্য হোটেলের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ হতে পারে। আবার, পেহেলগামের
কটেজে থেকে নিজেরা বাজার করে দিলে খরচ কম পড়বে।
পরামর্শ: -
এ ক্ষেত্রে অনলাইনে বুকিং না দিয়ে কাশ্মীর গিয়ে
যে শহরে থাকতে ইচ্ছে হয় সেখানে হোটেল বুকিং
দিলে ভালো হয়।
কাশ্মীরে গিয়ে
কোথায় কি খাবেন?
কাশ্মীরে নানা
ধরনের তাজা ফলের স্বাদ নেয়ার সুযোগ রয়েছে।
১) কাশ্মীরের বিখ্যাত মাটন বিরিয়ানি,
২) ওজওয়ান (নানা ধরনের খাবারের এক প্লেটার), ৩)কাশ্মীরি
কাবাব,
৪)মাটন রোগান জোশ,
৫) পনির চামান,
৬) আলুর দম,
৭) টক বেগুন,
৮)ভেড়ার মাংস,
৯) নাদরু ইয়াখনি বিখ্যাত।
১০) রফিক ক্যাফেটেরিয়ার কাবাব ও
১১) কুলফির স্বাদও মুখে লেগে থাকার মতো।
কাশ্মীরে শপিং
: -
জম্বুতে কম দামে প্রচুর ড্রাই ফ্রুইটস পাওয়া যায়। এখানকার
জাফরান বিখ্যাত। কেনা-কাটার জন্য জম্বুর রঘুনাথ
টেম্পল বেশ পরিচিত। এখানে কাশ্মীরি যাবতীয় জিনিস পাওয়া যায়। কাশ্মীরের পশমিনা শাল কেনার ক্ষেত্রে দাম যাচাই
করে নেয়া ভালো। কারন ভালো পশমিনা সালের দাম সর্বনিম্ন হলেও ৩০০০ রুপি। অনেকে কম দামে নকল ও খারাপ জিনিস দিয়ে দিতে পারে।
এছাড়াও পেহেলগামে পাবেন
১) মেয়েদের
জুয়েলারি,
২) ব্যাগ,
৩) কয়েন বক্স ও
৪) শো-পিস এবং কাশ্মীরে গেলে পাবেন নানা রকম মশলারখোঁজ যা রন্ধন প্রেমীদের কাজে লাগবে।
কাশ্মীর ভ্রমণ টিপস
১) ট্র্যাভেল এজেন্সির মাধ্যমে ১/২ মাস আগে বিমানের টিকেট কাটলে খরচ কম পড়বে।
২) শীতকালে কাশ্মীর যাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই শীতের প্রস্তুতি
নিয়ে যেতে হবে।
৩) কাশ্মীর ট্রিপে একটু সময় নিয়ে যাওয়া ভালো। ৫-৭ দিনের সময় নিয়ে গেলে কাশ্মীর ভ্রমণ উপভোগ্য
হবে।
৪) বুদ্ধিমানের কাজ হবে সীমান্ত পার হয়ে কলকাতা গিয়ে তারপর কাশ্মীর যাওয়া, ফলে কলকাতা দেখা
হবে এবং খরচও কম হবে। আবার ফেরার পথে চাইলে লাদাখ ও ঘুরে আসতে পারেন।\
৫) অনলাইনে টাকা ও রুপির রেট চেক করে আগেই টাকা রুপিতে এক্সচেঞ্জ করে নিলে ভালো হয়।
৬) কাশ্মীরের টুরিস্ট স্পট গুলোতে ভ্রমণের মজা বাড়ানোর
প্রলোভন দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়া চাটুকারদের
এড়িয়ে চলুন।
৭) দামাদামি করে জিনিস কিনবেন, কারন কাশ্মীরে বাহিরের পর্যটকদের কাছে দাম একটু বেশি চাওয়া হয়।
৮) কাশ্মীরের খাবারে মশলা বেশি থাকে তাই একটু বুঝে শুনে
খাবেন।
৯) সাধারনত রাত ৮ টার পর সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়,তাই আগেই কাজ সেরে নিন।
১০) কাশ্মীর ভ্রমণের আগে ট্র্যাভেল ট্যাক্স ৫০০ টাকা
সোনালি ব্যাংকের শাখায় জমা দিয়ে রাখুন।
উপসংহার : -
হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহনের ভাড়া ও অন্যান্য খরচ সময়ের
সাথে পরিবর্তন হওয়ায় ভ্রমণ গাইডে প্রকাশিত তথ্যের
সাথে চেক করা প্রয়োজন। সুবিধার জন্যে হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন যোগাযোগের মোবাইল নাম্বার
দেওয়া হয়। এসব নাম্বারে কোনরূপ আর্থিক লেনদেনের আগে যাচাই করবেন।
পোস্ট ট্যাগ
-
কাশ্মীর কিসের জন্য বিখ্যাত , কাশ্মীরের মেয়ে , কাশ্মীরের
সুন্দর জায়গা , কাশ্মীর ভ্রমণ , কাশ্মীরের সৌন্দর্য নিয়ে কবিতা , কাশ্মীরের সৌন্দর্য
ছবি , সেরা ভ্রমণ কাহিনী pdf , বিখ্যাত ভ্রমণ কাহিনী বই , ভ্রমণ কাহিনী বই pdf , আমার
ভ্রমণ কাহিনী , বিশ্ব ভ্রমণ কাহিনী , ছোট ভ্রমণ কাহিনী , ১৫০ শব্দের ভ্রমণ কাহিনী
, উঠোন পেরিয়ে দুই পা