আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির উৎকর্ষতার যুগে আগামীর পৃথিবীতে আরেক চমক নিয়ে আসছে কোয়ান্টাম কম্পিউটার। এসব
কম্পিউটার অত্যন্ত জটিল সমস্যার সমাধান করতে
পারবে খুবই অল্প সময়ে । সাধারণ কম্পিউটারের
চেয়ে এর গতি থাকবে কয়েক হাজার গুণ বেশী। বর্তমানের কম্পিউটার এক মিনিটে যে কাজ করে
, কোয়ান্টাম কম্পিউটার সে কাজটি করতে পারবে
এক সেকেন্ডেরও কম সময়ে।
কোয়ান্টাম কম্পিউটার কী?
কোয়ান্টাম কম্পিউটার খুবই শক্তিশালী যা বর্তমানের কম্পিউটারের
তুলনায় কয়েক হাজার গুণ দ্রুত গতিতে কাজ করতে পারবে। এটি অনেক দ্রুত সর্বাধিক তথ্য প্রসেস করতে পারবে। এর এলগরিদম, কাঠামো সবকিছুই
সাধারণ কম্পিউটার থেকে সম্পূর্ণরুপে ভিন্ন হবে।
বিজ্ঞানীরা আশা প্রকাশ করছেন, "কোয়ান্টাম কম্পিউটার আবিষ্কৃত
হলে মানুষের হাতে অপরিসীম কম্পিউটিং ক্ষমতা চলে আসবে"।
প্রযুক্তিবিদের ধারণা, 'যে সমস্যা সমাধান করতে এখন ১০০ বছর লাগে
সেটা এখন মূহুর্তের মধ্যেই করা যাবে'। একটা পাসওয়ার্ড ভাঙতে সাধারণ কম্পিউটারের যদি
১০ বছর লাগে। কোয়ান্টাম কম্পিউটারের লাগবে কয়েক সেকেন্ড।
কোয়ান্টাম কম্পিউটার কিভাবে
তৈরি হবে?
কম্পিউটার চিপের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি ও চিপের আকৃতি ক্ষুদ্র হবে। এবং খুব শীঘ্রই সাব-অ্যাটোমিক বা পারমাণবিক কণার
পর্যায়ে চলে যাবে। কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যায় ক্ষুদ্র কণাদের জগতে অনেক অদ্ভুত সব নিয়ম
রয়েছে, যা আমাদের পরিচিত জগতে অসম্ভব বলে মনে
হয়। কম্পিউটার যখন কোয়ান্টাম জগতে প্রবেশ করবে, তার মধ্যেও এই অদ্ভুত নিয়মগুলো
কাজ করবে। ফলোশ্রুতিতে সেই কম্পিউটারের মধ্যে
বিস্ময়কর কিছু বৈশিষ্ট্য দেখা যাবে। এই বৈশিষ্ট্যগুলো সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে যেকোনো
কম্পিউটার, এমনকি সুপারকম্পিউটারের চেয়েও ও বহুগুণে এগিয়ে থাকবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার।
কীভাবে কাজ করে?
কোয়ান্টাম কম্পিউটার সব কাজ করে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের বিভিন্ন
ধর্মকে সরাসরি কাজে লাগিয়ে। কোয়ান্টাম লেভেলের কণিকায় সব তথ্য সংরক্ষণ করা যায়,
এদেরকে বলা হয় কোয়ান্টাম ইনফরমেশন।
১) এনট্যাঙ্গলমেন্ট,
২) টেলিপোর্টেশন,
৩) সুপারপজিশন ইত্যাদি ধর্ম ব্যবহার করে তথ্য আদান-প্রদান, হিসাব
নিকাশ সহ সব কাজ করা সম্ভব।
সাধারণ ও কোয়ান্টাম কম্পিউটারের
পার্থক্য কি?
বর্তমানের কম্পিউটারের
চাইতে একেবারে ভিন্ন উপায়ে কাজ করে কোয়ান্টাম কম্পিউটার।তথ্য প্রযুক্তিবিদ জাকারিয়া স্বপন বলেন, "প্রথাগত কম্পিউটারগুলো মূলত জিরো ও ওয়ান বিটস দিয়ে পরিচালিত হয়। কিন্তু
কোয়ান্টাম কম্পিউটার এই একই ফর্মুলাতে কাজ করে না।"
"এখানে একটা বিটই দুটো অবস্থাতেই থাকতে পারে। অর্থাৎ জিরো
ও ওয়ান একই সঙ্গে হতে পারে। কোয়ান্টাম কম্পিউটার
এভাবেই সাধারণ কম্পিউটার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা"।
কারা কোয়ান্টাম কম্পিউটার
নির্মাণে বিনিয়োগ করেছে?
সিবি ইনসাইটের তথ্য অনুসারে জানা যায় কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ে প্রতি বছর বিলিয়ন বিলিয়ন
ডলার বিনিয়োগ হচ্ছে। এবং প্রত্যেক বছর তা বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রায় ৩/৪ গুণ বেশি হারে। ফলে সিলিকন ভ্যালিসহ বিশ্বজুড়ে
কোয়ান্টাম কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার নির্মাণের জন্য গড়ে উঠছে নতুন নতুন
স্টার্টআপ।
কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি করার প্রতিযোগিতায় রয়েছে গুগল, আইবিএম,
মাইক্রোসফটের মতো টেক জায়ান্টরা।
গোপনীয়তার কী হবে?
সাধারণ কম্পিউটারে যে প্রযুক্তিতে তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা করা হয় তাকে বলা হয় এনিক্রপশন।
এনক্রিপশন এমন পদ্ধতি কে
বলা হয় যা একটি বার্তার তথ্য উলটপালট করে দুর্বোধ্য
করে তোলা, যাতে এর অর্থ অন্য কেউ বুঝতে না পারে।
অর্থাৎ তথ্যটি এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে গিয়ে এমনভাবে পৌঁছাচ্ছে যে কেউ মাঝপথে এটি পেয়ে গেলেও
সে কিছু বুঝতে পারবে না।
এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন বলতে বোঝায় এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে
সাংকেতিক বার্তা বিনিময়, সাধারণ কম্পিউটার দিয়ে যার পাঠোদ্ধার করা কঠিন।
কিন্তু বিজ্ঞানীদের মতে, কোয়ান্টাম কম্পিউটার বর্তমানের এন্ড টু
এন্ড এনক্রিপশন ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলতে পারবে।
তারা বলছেন, সাধারণ কম্পিউটারের সাহায্যে গোপনীয়তা ভাঙতে কয়েক বছর
লাগলেও, কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মাধ্যমে তা এক সেকেন্ডে করা সম্ভব হবে।
"সাধারণ কম্পিউটারের তুলনায় কোয়ান্টাম কম্পিউটার খুবই শক্তিশালী।
উদাহরণ স্বরূপ : - বাইসাইকেল কে ৩০০০ সিসির
গাড়ি নিয়ে ধাওয়া করে ধরতে যেমন কয়েক মিলি-সেকেন্ড সময় লাগবে," এমন টাই বলেন
মি. স্বপন।
সংরক্ষিত তথ্যের কি হবে?
প্রতিদিনই আমাদের প্রচুর
তথ্য আমাদের অনুমতি ছাড়াই আরেক পক্ষের কাছে চলে যায়। সেসব তথ্য তারা সংরক্ষণ করে রাখে। আশঙ্কা হচ্ছে- এসব তথ্য যখন কোয়ান্টাম
কম্পিউটারওয়ালাদের হাতে পড়বে তখন কী হবে!?
"বর্তমানে আমরা ইন্টারনেটে
যা কিছু করি, অনলাইনে কেনাকাটা, ব্যাংকিং, সোশাল মিডিয়ায় যোগাযোগ ইত্যাদি যা কিছুই
করি সেগুলো এনক্রিপ্টেড থাকে। কিন্তু যখন কোয়ান্টাম কম্পিউটার চলে আসবে তখন এসব এনক্রিপশন
খুব সহজেই ভেঙে ফেলা সম্ভব হবে,"।
পোস্ট-কোয়ান্টাম কোম্পানির
একজন বিজ্ঞানী হ্যারি ওয়েন বিবিসিকে এবস তথ্য জানান।
কম্পিউটার যুদ্ধ বা কোয়ান্টাম
মহাপ্রলয় কি?
চিন্তা করুন এমন এক ডিজিটাল বিশ্বের কথা যেখানে সবকিছু এনক্রিপ্টেড
বা সুরক্ষিত, সেখানে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের সাহায্যে হঠাৎ করেই সব গোপনীয়তা ভেঙে
ফেলা হবে, তখন কী পরিস্থিতি তৈরি হবে?
বিজ্ঞানীরা এই ঘটনাকে বলছেন "কোয়ান্টাম মহাপ্রলয়।"
যে দেশ সর্বপ্রথমে কোয়ান্টাম কম্পিউটার প্রযুক্তি তৈরি করতে সক্ষম
হবে তারাই ডিজিটাল বিশ্বে আধিপত্য বিস্তার
করবে।
সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্র হবে কোন টি?
কোয়ান্টাম কম্পিউটার যেসব রাষ্ট্রের কাছে থাকবে তারা অন্য দেশের
রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায়
হস্তক্ষেপ করতে সক্ষম হবে। যার ফলে সারা বিশ্বে উত্তেজনা দেখা দিতে পারে।
এরকম পরিস্থিতি মোকাবেলার
জন্য বিজ্ঞানীরা এখন থেকেই প্রস্তুতি নেওয়ার
জোর তাগিদ দিচ্ছেন।
"একটি দেশ চাইলেই আরেকটি দেশের তথ্য চুরি করতে সক্ষম হবে।
ক্ষেপণাস্ত্র থাকুক, বা পরমাণু বোমাই থাকুক, ভবিষ্যতে যাদের কাছে কোয়ান্টাম কম্পিউটার
থাকবে তারাই হয়ে উঠবে সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্র,"।
তথ্য টি- প্রযুক্তিবিদ জাকারিয়া স্বপনের।
আশার আলো : -
সুখবর হচ্ছে ক্ষমতাধর রাষ্ট্র গুলো রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য ইতোমধ্যেই
এমন প্রযুক্তিতে সংরক্ষণ করছে যা কোয়ান্টাম কম্পিউটার দিয়েও ভেঙে ফেলা কঠিন হবে।
গুগল, মাইক্রোসফট, ইন্টেল ও আইবিএমের মতো প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো
খুবই ব্যয়বহুল ও পরিশ্রমসাধ্য এসব বিষয় নিয়ে কাজ করছে।
পোস্ট ট্যাগ -
কোয়ান্টাম কম্পিউটার কি, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং