নিউরালিংক চিপ মগজে বসাতে
এত আবেদনের রহস্য ! ব্রেনের ভিতরে এবার বসানো হবে চিপ! নিউরালিংকের চিপের মাধ্যমে মানবদেহের
স্থুলতা, অটিজম, হতাশা,সিজোফ্রেনিয়াসহ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা সারিয়ে
তোলা সম্ভব হবে । পাশাপাশি মানুষের মস্তিষ্ককে ওয়েব ব্রাউজিং ও টেলিপ্যাথির মতো কাজে
সক্ষম করে তোলা সম্ভব।
মানুষ কি যান্ত্রিক হয়ে
যাবে?
কল্প বিজ্ঞানের রোবোকপ বা টার্মিনেটর মুভির বাস্তব রূপ দেখতে যাচ্ছে
পৃথিবীবাসী। মানুষ আর যন্ত্র এক হয়ে যাচ্ছে শীগ্রই । মস্তিষ্কের ভিতরে নানা যন্ত্রপাতি বসানোর পরীক্ষা-নিরীক্ষার দায়িত্ব
দেয়া হয়েছে ইলন মাস্কের সংস্থা ব্রেইন-ইমপ্লান্ট কোম্পানিকে।
নিউরালিংক চিপ ব্রেইনে
কিভাবে সেট করবে?
ব্রেইনে চিপ বসাতে আগ্রহীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে নিউরালিংক মানব মস্তিষ্কে চিপ স্থাপন করার পরীক্ষা-নিরীক্ষার
অনুমতি পেয়েছে ইলন মাস্কের মালিকানাধীন ব্রেইন-ইমপ্লান্ট কোম্পানি।
ইচ্ছুক ব্যক্তিদের ব্রেনে
চিপ বসিয়ে চলবে বেশ কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা। এর সঙ্গে থাকবে ইলেকট্রোড। সফল হলে সবশেষে
কিছু তারের সংযোগ করা থাকবে মথার খুলির ভিতর।
সংস্থাটি যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের
কাছ থেকে প্রথম ইন-হিউম্যান ক্লিনিক্যাল স্টাডি শুরুর অনুমোদন পেয়েছে। একই সাথে কম্পিউটারের
সঙ্গে মস্তিষ্কের সংযোগ স্থাপন করে মানুষের দৃষ্টিশক্তি এবং গতিশীলতা পুনরুদ্ধার করতে
সাহায্য করতে চায় সংস্থাটি।
প্যারালাইসিস,প্রতিবন্ধী
ও অন্ধত্বের চিকিৎসায় এর উপকারিতা কী?
ইলন মাস্কের মালিকানাধীন
ব্রেইন-ইমপ্লান্ট সংস্থা টি আশা প্রকাশ করছে: - প্যারালাইসিস ও অন্ধত্বের চিকিৎসা
সহ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদেরও কম্পিউটার এবং মোবাইল
প্রযুক্তি ব্যবহার করতে সহায়তার জন্য মাইক্রোচিপ ব্যবহার করা হবে। বানরের ওপর পরীক্ষা
করা চিপগুলোও এখানে কাজে লাগানো হতে পারে।
ইলন মাস্কের স্বপ্ন বাস্তব
হতে চলেছে?
২০১৯ সাল থেকে প্রতি বছরই ইলন মাস্ক বলে আসছিলেন মানবদেহে চিপ স্থাপনের
কথা। সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছরই বাস্তবে রূপ নিতে পারে মাস্কের স্বপ্ন।
ওয়ালস্ট্রিট জার্নালকে ইলন মাস্ক পূর্বেই জানিয়েছিলেন যে,২০২২ সালের
কোনো একসময়ে নিউরালিংক মানবদেহে চিপ স্থাপন করতে সক্ষম হবে।
২০২২ সালের শুরুর দিকেই নিউরালিংক সংস্থাটি মার্কিন এফডিএ’র অনুমোদন
চেয়ে আসছিল। সে সময়ে নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে আবেদনটি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল।
তবে ইতোমধ্যেই শূকর ও বানরের মস্তিষ্কে নিউরালিংক ডিভাইস সফলতার সঙ্গে স্থাপন করা সম্ভব
হয়েছে। ডিভাইসটি স্থাপন ও সম্পূর্ণ নিরাপদ বলে দাবি করেছে সংস্থাটি।
নিউরালিংক চিপের আকার কী?
এ প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন ইলন মাস্ক এক কথায়।তিনি বলেন,"জিনিসটা
খানিকটা ছোট ছোট তার দিয়ে খুলিতে বসানো ফিটবিটের মতো। ফিটবিট মানে,- ফিটনেস ট্র্যাকার। আর তা হলো - স্মার্টফোনে বসানো যেসব চিপ মানুষের
হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন বা রক্তচাপ ইত্যাদি রেকর্ড করে রাখে।
নিউরালিংক আসলে কি?
এই চিপটার আসলে সেভাবে
কোনো ব্র্যান্ড নেম নেই। অনেকের নিকটে এটি
প্রতিষ্ঠানের নামেই ‘নিউরালিংক’-হিসেবে
পরিচিত।
এ নিউরালিংক, সংক্ষেপে ‘লিংক’
হচ্ছে আসলে ১ হাজার ২৪ টি চ্যানেল বা ইলেকট্রোডযুক্ত ২৩×৮ মিলিমিটার আকৃতির
একটি চিপ। ইলেকট্রোডগুলো নন-করোসিভ, মানে ক্ষয়ে যায় না—এমন পদার্থ দিয়ে তৈরি।
যেমন: - সিলিকন কার্বাইড। ব্যাস ৫ মাইক্রন। এই ব্যাসের পরিমাণ মানুষের
একটি চুলের ২০ ভাগের ১ ভাগ মাত্র।
নিউরালিংকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ
কাজ কি?
এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে : -
১) ‘পড়তে’ (Read)
২) ‘লিখতে’ (Write) পারা।
কম্পিউটার বিজ্ঞানের ভাষায়
‘পড়া’ বা ‘রিড’ করা বলতে, সিগন্যাল শনাক্ত করতে পারা বুঝায়। কমান্ড বা নির্দেশ বুঝতে
পারা।
আর ‘লেখা’ বা ‘রাইট’ করা
মানে আউটপুট দেওয়া বুঝায়। এসব জানার জন্য কম্পিউটার
বিজ্ঞানী হওয়া জরুরি নয়। যাঁরা কম্পিউটার চালান,তাদের প্রায় সবাই রিড-রাইটের সঙ্গে
পরিচিত।
নিউরালিংকের ব্রেইন চিপ
কীভাবে কাজ করে?
নিউরালিংক মূলত নিউরন থেকে আসা সিগন্যাল,যা ‘রিড’ বা শনাক্ত করতে
পারে এবং সে হিসেবে ‘রাইট’, মানে নিউরনকে নির্দিষ্ট কোনো কাজের কথা ভাবার জন্য যে বৈদ্যুতিক
ইমপালস তৈরি করতে হয়, তা উৎপন্ন করে। ফলে নিউরনটি সক্রিয় হয় এবং সেই কাজ করতে পারে।
নিউরালিংক চিপ কতটা কার্যকর?
ইলন মাস্কের মালিকানাধীন
ব্রেইন-ইমপ্লান্ট সংস্থাটি দীর্ঘদিন
অ্যানিম্যাল ট্রায়াল, অর্থাৎ বিভিন্ন প্রাণীর মাথায় চিপ বসিয়ে পরীক্ষা করে দেখেছে।
২০২১ সালের এপ্রিলে পেজার নামে একটি বানরের মাথায় প্রথম চিপ বসায় নিউরালিংক। এ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি তিন মিনিটের
একটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, পেজার নামের বানরটি শুধু চিন্তা করে করে,
কোনো কিছু হাত দিয়ে না ধরেই মাইন্ড পং নামের একটি ভিডিও গেম খেলছে।সেই সময়ে সামাজিক
যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন তোলে এ ভিডিও
টি।
গবেষকেরা পেজার নামের এ বানরটির হাত ও বাহুর মোটর করটেক্স স্নায়বিক
অঞ্চলে এই ‘লিংক’ বসিয়েছিলেন। এই অঞ্চল মূলত স্বেচ্ছায় নড়াচড়া করার পরিকল্পনা করে,
নড়াচড়া শুরু করে এবং নড়াচড়ার পুরো কাজটাই নিয়ন্ত্রণ করে।
চিপ বসিয়ে দেওয়ার পর লিংক থেকে গবেষকরা পেজারের সম্পূর্ণ স্নায়বিক
কাজ কর্মের একটি মানচিত্র পেয়ে যান। তারপর স্নায়বিক বিভিন্ন ধরনের সিগন্যালের জন্য
১) মোটর স্নায়ু কীভাবে সাড়া দেয়?
২) এর ফলে নড়াচড়া কেমন
হয়?
৩) কোনো চিন্তা করলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়?
৪) চিন্তার সঙ্গে প্রতিক্রিয়ার
সম্পর্ক কী রকম হয়?
এসব বুঝতে পেরে তারা একটি মডেল তৈরি করেছিলেন। এর ওপর নির্ভর করে
তাঁরা আবার একটি ‘ডিকোডার’ বানিয়েছেন। আসলে কাজ করে এই ডিকোডার।
নিউরালিংকের গঠন প্রণালী
: -
মস্তিষ্ক কোনো কিছু চিন্তা
করলে ডিকোডার সে সিগন্যাল গ্রহণ করে, এর ফলে মোটর স্নায়ুটির কীভাবে সাড়া দেওয়া উচিত,
তা অনুমান করার চেষ্টা করে। চিন্তা থেকে আসা সিগন্যাল অনুযায়ী বিভিন্ন অঙ্গ কীভাবে
সাড়া দেওয়ার কথা, কতটুকু দ্রুত এবং কোন দিকে নড়াচড়া করার কথা সেসব এটি হিসাব করে বের
করে ফেলে। এই হিসাব সে আউটপুট দেয় কম্পিউটারকে।
ফলে কম্পিউটার বুঝতে পারে, স্ক্রিনের ওপর মাউসের কার্সরটা কোন দিকে নাড়ানো উচিৎ,সে
অনুযায়ী এটি কার্সরটা নাড়ায়। এভাবেই পেজার টি শুধু চিন্তা করেই কার্সরটি নাড়াতে ও গেম
খেলতে পেরেছিল।
এ সব চিন্তার ওপর নির্ভর করে শুধু হাত নয়, পুরো দেহের নড়াচড়াই অনুমান
করা যায় এবং সে হিসাবে বিভিন্ন যন্ত্রকে নির্দেশ দেওয়া যায়।
সে চিন্তা মাথায় রেখেই গবেষণা করে মানবদেহের জন্য এই প্রযুক্তিকে
উপযোগী করে তুলেছেন। এ চিন্তার ওপর নির্ভর করে একজন মানুষ বিভিন্ন অঙ্গ নড়াচড়া করা,ও
সামনে রাখা বিভিন্ন যন্ত্রকে সেভাবে কাজ করার নির্দেশ দিতে পারবে।
উদাহরণ স্বরুপ: -
পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তি গাড়ি চালানোয় হাত ও পা নাড়া চড়া না করে ব্রেক করা, স্পিড বাড়ানো কমানো, ডানে বামে যাওয়া,
শুধু প্রয়োজনীয় চিন্তার মাধ্যমে সকল কাজ সম্পন্ন
করতে পারবেন।
একইভাবে চিন্তার মাধ্যমে চালানো যাবে মুঠোফোন সহ মানব জীবনে প্রয়োজনীয়
সকল যন্ত্র।
মানব জীবনে কি কি উপকার
হবে?
এ প্রসঙ্গে ইলন মাস্কের দাবি করেন: - নিউরালিংকের এ বিশেষ চিপের
মাধ্যমে
১) মানবদেহের স্থুলতা,
২) অটিজম,
৩):হতাশা,
৪) সিজোফ্রেনিয়াসহ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা সারিয়ে তোলা সম্ভব হবে
।
৫) পাশাপাশি মানুষের মস্তিষ্ককে ওয়েব ব্রাউজিং করা,
৬) টেলিপ্যাথির মতো কাজে
সক্ষম করে তোলা সম্ভব হবে।
নিউরালিংক ইভেন্টে তিনি
আরো বলেছেন,
৭) ভবিষ্যতে নিউরালিংক স্মৃতি ‘সেভ’ করে রাখতে পারবে এবং সময়মতো
‘রিপ্লে’ দেখাতে পারবে।
৮) চাইলে স্মৃতির ‘ব্যাকআপ’
রেখে দেওয়া এবং পরে ‘রিস্টোর’ করে নেওয়া সম্ভব।
৯) তাঁর মতে, ‘আপনারা চাইলে এসব স্মৃতি নতুন কোনো দেহে বা কোনো
রোবটের ভেতরে ডাউনলোড করে নিতে পারবেন। বড় বিচিত্র এক ভবিষ্যতের
দিকে এগিয়ে যাচ্ছে মানব সভ্যতা।
আরও সাবধানতা প্রয়োজন:
-
বিজ্ঞানচিন্তার সূত্রে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিউরালিঙ্ক
প্রাণীদের ওপর পরীক্ষা চালানোর ফলে মারা গেছে অনেক নিরীহ প্রাণী। এ বিষয়ে এখন রাষ্ট্রীয় তদন্ত চলছে। সে অবস্থাতেই
এ অনুমতি দেওয়া হলো সংস্থাটিকে।
নিউরালিংকের ফলাফল কী হবে?
USA. সরকারের একাধিক বিভাগ নিউরালিংকের এসব গবেষণা নিয়ে তদন্ত করছে।
এসবের ফলাফল কী হবে?
ইলন মাস্কের এ উদ্যোগের
মাধ্যমে আসলেই মানুষ কতটা উপকার পেতে পারবে,
সে প্রশ্নের জবাবের অপেক্ষায় পুরো পৃথিবী ।
ক্রিসপার আবিষ্কার করে
জিন সম্পাদন : -
মানুষ ইতিমধ্যে ক্রিসপার আবিষ্কার করে জিন সম্পাদনার উপায় বের করে
ফেলেছে ইলন মাস্ক। হিউম্যান ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালানোর অনুমতি পেয়ে গেছে সংস্থা টি।
কল্পবিজ্ঞান এবার সত্যি হওয়ার যুগে প্রবেশ করতে সক্ষম হবে!
নিউরালিংক চিপ ইলেকট্রনিকস প্রযুক্তিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত
করে পৃথিবীকে নিয়ে যাবে অনন্য উচ্চতায়।
পোস্ট ট্যাগ -
নিউরালিংক চিপ কি , নিউরালিংক কি