মানব জীবনের চূড়ান্ত সফলতা ও ব্যর্থতা নির্ভর করে তার
অনন্ত জীবনে জান্নাত বা জাহান্নাম লাভের মাধ্যমে।
কাফির-বেদ্বীনরা তো চিরস্থায়ী জাহান্নামী।কারণ ঈমান ছাড়া কোন ব্যক্তিই জান্নাতে
যেতে পারবেনা । কিন্তু মুসলমান হয়েও কিছু মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না,জান্নাতে
প্রবেশ থেকে তারা বঞ্চিত থাকবে। হাদিসে রয়েছে
১৭ শ্রেনীর মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করতে
পারবে না। তারা যতই নেক আমল করুক না ক্যানো, জান্নাত তাদের জন্য হারাম হয়ে যাবে।
মুসলমান হওয়ার
পরও কিছু গোনাহের কারণে ১৭ শ্রেনীর মানুষ জান্নাতে
প্রবেশ করতে পারবে না।
এরা হলো: -
১) হারাম খাদ্য
ভক্ষণকারী : -
হারাম খাদ্য গ্রহণকারী জান্নাতে যাবে নাঃ -
হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
(সা.) ইরশাদ করেন, “যে দেহ হারাম খাদ্য দ্বারা লালিত-পালিত হয়েছে, তা জান্নাতে প্রবেশ
করবে না।”
(সুনানে বাইহাকী,
হাদীস নং ৫৫২০)
২) আত্মীয়তার
সম্পর্ক ছিন্নকারী : -
আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী জান্নাতে যাবে নাঃ-
হযরত যুবাইর ইবনে মুতইম (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
(সা.) ইরশাদ করেন, “আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না।”
(সহীহ বুখারী,
হাদীস : ৫৫২৫)
৩) প্রতিবেশীকে
কষ্ট দানকারী: -
যারা প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয় তারা জান্নাতে যাবে নাঃ-
হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.)
বলেন, “যার অত্যাচার থেকে প্রতিবেশীরা নিরাপদ নয়, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।”
(সহীহ মুসলিম,
হাদীস নং ৬৬)
৪) এ তিন শ্রেণীর লোক জান্নাতে যাবে না :
(ক)মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তান
(খ)দাইউস
(গ)পুরুষের বেশ ধারণকারীণী
এরা জান্নাতে যেতে পারবে নাঃ-
রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, “তিন শ্রেণীর লোক জান্নাতে
যাবে না : মাতা-পিতার অবাধ্য, দাইউস (অর্থাৎ যে ব্যক্তি তার স্ত্রী-বোন প্রমুখ অধীনস্থ
নারীদের বেপর্দা চলাফেরায় বাধা দেয় না) এবং পুরুষের বেশ ধারণকারী মহিলা।”
(মুসতাদরাকে
হাকিম, হাদীস নং ২২৬)
৫) অশ্লীলভাষী
ও উগ্রমেজাজী: -
অশালীন ভাষা ব্যবহারকারী ও বদমেজাজি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেনা: -
হারেছা বিন ওহাব (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)
ইরশাদ করেছেন, “অশ্লীলভাষী ও উগ্রমেজাজী ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না।”
(আবু দাউদ, হাদীস নং ৪১৬৮)
৬) ধোঁকাদানকারী
শাসক : -
প্রজা বা অধীনস্থদেরকে ধোঁকাদানকারী শাসক জান্নাতে যাবে
না।
হযরত মা‘কাল বিন ইয়াসার (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)কে বলতে শুনেছি, “মুসলমানদের উপর প্রতিনিধিত্বকারী শাসক যদি এ
অবস্থায় মারা যায় যে, সে তার অধীনস্থদেরকে ধোঁকা দিয়েছে, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তার
জন্য জান্নাত হারাম করে দিবেন।”
(সহীহ বুখারী,
হাদীস নং ৬৬১৮)
৭) অন্যের সম্পদ
আত্মসাৎকারী: -
অন্যের সম্পদ আত্মসাৎকারী জান্নাতে যাবে না। হযরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.)
ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি কসম করে কোন মুসলমানের সম্পদ আত্মসাৎ করে, আল্লাহ তা‘আলা তার
জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব করে দেন এবং জান্নাত হারাম করেন। এক ব্যক্তি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ!
যদিও সামান্য কোন জিনিস হয়? তিনি বললেন, যদিও পিলু গাছের একটি ছোট ডাল হোক না কেন।”
(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯৬)
৮) অবাধ্য সন্তান
কোটা দানকারী ও মদ্যপ: -
খোটাদানকারী, অবাধ্য সন্তান ও মদ পানকারী জান্নাতে যাবে
না। হযরত আবদুল্লাহ বিন আমর (রা.) বলেন, নবী কারীম (সা.)
ইরশাদ করেন, “উপকার করে খোটা দানকারী, মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তান, সর্বদা মদপানকারী--এই
তিনশ্রেণীর মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করবে না।”
(সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ৫৫৭৭)
৯) চোগলখোর:
-
চোগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করবে না। হযরত হুযাইফা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ
করেন, “চোগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করবে না।”
(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫১)
১০। অন্যকে নিজের
পিতা পরিচয় দানকারী : -
অন্যকে নিজের
পিতা বলে পরিচয় দানকারীর জন্য জান্নাত হারাম। হযরত সা‘দ ও আবু বাকরাহ (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
(সা.) ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি জেনে শুনে নিজেকে অন্য পিতার সাথে সম্পর্কিত করে অর্থাৎ
নিজেকে অন্য পিতার সন্তান বলে পরিচয় দেয়, তার জন্য জান্নাত হারাম।”
(সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬২৬৯)
১১) গর্ব-অহংকারকারী:
-
গর্ব-অহংকারকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
(সা.) ইরশাদ করেন:- “যার অন্তরে অনু পরিমাণ অহংকার রয়েছে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে
না।”
(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩১)
১২) রাসুলের(সা.)আনুগত্য বর্জনকারী নাফরমান :-
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নাফরমান জান্নাতে যেতে পারবেনা। হযরত আবু হুরাইরা (রা.)থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.)
ইরশাদ করেন, “আমার সব উম্মত জান্নাতে যাবে, কিন্তু যে (জান্নাতে যেতে) অস্বীকার করেছে
সে ব্যতীত। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কে অস্বীকার করেছে? তিনি বললেন,
যে আমার আনুগত্য করে, সে জান্নাতে যাবে। আর যে আমার নাফরমানী করে, সে (জান্নাতে যেতে)
অস্বীকার করেছে।”
(সহীহ বুখারী,
হাদীস নং ৬৭৩৭)
১৩) দুনিয়ার
জন্য ইলম অর্জনকারী: -
দুনিয়াবী উদ্দেশ্যে ইলম অর্জনকারী জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.)
ইরশাদ করেন:-“যে ইলম দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অন্বেষণ করা হয় সে ইলম কে যে ব্যক্তি
দুনিয়াবী কোন স্বার্থ-সম্পদ হাসিলের উদ্দেশ্যে শিক্ষা করে, সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে
না।”
(আবু দাউদ, হাদীস
নং ৩১৭৯)
১৪) অকারণে তালাক
কামনা কারীণী: -
অকারণে তালাক কামনা কারীণী জান্নাতে প্রবেশ করবে না। হযরত সাওবান (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ
করেন,:-“যে মহিলা তার স্বামীর কাছে অকারণে তালাক কামনা করে, সে জান্নাতের সুঘ্রাণও
পাবে না।”
(জামি‘ তিরমিযী, হাদীস নং ১১০৮)
১৫) চুলে কালো
কলপ ব্যবহারকারী: -
মাথার চুলে কালো কলপ ব্যবহারকারী জান্নাতে যাবে না। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
(সা.) ইরশাদ করেন: -“শেষ যুগে কিছু লোক কবুতরের সীনার ন্যায় কালো কলপ ব্যবহার করবে।
তারা জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না।”
(সুনানে নাসায়ী,
হাদীস নং ৪৯৮৮)
১৬) লোক দেখানো
/ রিয়াকারী : -
রিয়াকারী জান্নাতে যাবে না (মানুষকে দেখানোর জন্য নেক
আমলকারী )। হযরত আবু হুরাইরার(রা.) সূত্রে বর্ণিত এক দীর্ঘ হাদীসে
রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, “কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম একজন শহীদকে ডাকা হবে। অতঃপর
একজন ক্বারীকে। তারপর একজন দানশীল ব্যক্তিকে হাজির করা হবে। প্রত্যেককে তার কৃতকর্ম
সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। অতঃপর শহীদকে বীর-বাহাদুর উপাধি লাভের উদ্দেশ্যে জিহাদ
করার অপরাধে, ক্বারী সাহেবকে বড় ক্বারীর উপাধি ও সুখ্যাতি লাভের জন্য কিরাআত শেখার
অপরাধে এবং দানশীলকে বড় দাতা উপাধি লাভের নিয়তে দান-সদকা করার অপরাধে উপুড় করে জাহান্নামে
নিক্ষেপ করা হবে।”
(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৫২৭)
১৭) ওয়ারিসকে
বঞ্চিতকারী: -
ওয়ারিসকে বঞ্চিতকারী জান্নাত থেকে বঞ্চিত হবে। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন,:- “যে ব্যক্তি কোন ওয়ারিসকে
তার অংশ থেকে বঞ্চিত করলো, আল্লাহ তা‘আলা তাকে জান্নাতের অংশ থেকে বঞ্চিত করবেন।”
(সুনানে ইবনে মাজা, হাদীস নং ২৬৯৪)
যারা আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা লাভ করে জান্নাতে যেতে
পারবে না, তারাই জীবনে চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ। আল্লাহ আমাদেরকে জান্নাতের উপযোগী আমল
করে জান্নাতুল ফেরদৌস লাভে ধন্য করুন আমীন।
পোস্ট ট্যাগ
-
দাইউস কখনো জান্নাতে প্রবেশ করবে না , দানশীল জান্নাতে
যাবে, কারা বিনা হিসাবে জাহান্নামে যাবে , নামাজ ছাড়া কি জান্নাতে যাওয়া যাবে? ,
মরদা স্ত্রীলোক , মরদা স্ত্রীলোক কাকে বলে , শুধু নামাজ পড়লেই কি জান্নাতে
যাওয়া যাবে , জান্নাত কত বড়