মসজিদে আকসার সাথে ভালোবাসার সম্পর্ক প্রতিটি মুমিনের। নবী রাসুলদের
স্মৃতি বিজড়িত ফিলিস্তিন।
ফিলিস্তিনকে ভালোবাসার কারণ সমূহ নিম্নরুপ -
1) ফিলিস্তিন নবীদের পূণ্যভূমি -
নবী ইসহাক আলাইহিস সালাম, ইয়াকুব আলাইহিস সালাম ও ইউসুফ আলাইহিস
সালামের জন্ম এই ফিলিস্তিনে।
2) ইবরাহীম আলাইহিস সালাম -
খলিলুল্লাহ ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম সর্বপ্রথম ফিলিস্তিনে হিজরত
করেন এবং পরবর্তীতে স্ত্রী সারা কে নিয়ে সেখানে বসবাস করেন।
3) লুত আলাইহিস সালাম -
লুত আলাইহিস সালামের কওমের উপর পতিত গজব থেকে আল্লাহ তাআলা লুত
আলাইহিস সালামকে রক্ষা করেন ফিলিস্তিনে।
4) নবী মুসা আলাইহিস সালাম -
মিসর থেকে নবী মূসা আলাইহিস সালাম ইসরাইলকে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন পবিত্র
এই ভূমিতে প্রবেশ করার জন্য। যদিও ইহুদিরা তাদের চিরকালীন কাপুরুষোচিত স্বভাব ও বানরামীর
কারণে প্রবেশ করতে পারেনি। মুসা আলাইহিস সালাম এই ভূমিকে পবিত্র বলে আখ্যায়িত করেন।
5) নবী দাউদ আলাইহিস সালাম -
দাউদ আলাইহিস সালাম অত্যাচারী জালূতের কপালে পাথর ছুঁড়ে হত্যা
করে মুমিনদেরকে ফিলিস্তিন পুনরুদ্ধারে সহযোগিতা করেন।
6) নবী সুলাইমান আলাইহিস সালাম -
সুলাইমান আলাইহিস সালাম ফিলিস্তিনে বসেই জিন- ইনসান সহ পৃথিবী বাসির
উপর রাজত্ব করেন। সুলাইমান আলাইহিস সালাম ও পিঁপড়ের যে বিখ্যাত কাহিনী কুরআনে
বর্ণিত আছে তা এই শহরেই ঘটেছিল। বর্তমান
city of ashkelon এ অবস্থিত আন্ট ভ্যালি আছে واد
النمل নামে।
7) নবী জাকারিয়া আলাইহিস সালাম -
জাকারিয়া আলাইহিস সালাম
ফিলিস্তিনেই বস- বাস করতেন এবং তার মিহরাব এই ফিলিস্তিনেই ছিল।
8) মারইয়াম আলাইহিস সালাম -
এই বায়তুল মাকদিসেই মারইয়াম আলাইহাস সালাম বসবাস করতেন এবং অলৌকিক
খাদ্যভাণ্ডার প্রাপ্ত হতেন।
9) ঈসা ইবনে মারিয়াম -
এ ফিলিস্তিনেই মারইয়াম আলাইহিস সালাম কোনো পুরুষ ব্যতীত অলৌকিকভাবে
ঈসা আলাইহিস সাল্লাম কে গর্ভে ধারণ করন।
10) নবী ঈসা ও ইয়াহইয়া আলাইহিস সালাম এই ফিলিস্তিনেই জন্মগ্রহণ
করেন এবং বেড়ে উঠেন।
11) ঈসা আলাইহিস সালামকে হত্যার ষড়যন্ত্র -
এ ফিলিস্তিনের মাটিতেই ঈসা আলাইহিস সালামকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা
হলে আল্লাহ তাআলা তাকে আকাশে উঠিয়ে নেন।
12) বাইতুল মাকদাসে আল্লাহর
মেহমান -
মিরাজের রাতে উর্ধ্বাকাশে
গমনের পূর্বে আল্লাহ তাআলা রাসুল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ফিলিস্তিনের বায়তুল মাকদিসে মেহমান করেন।
13) বায়তুল মাকদিসের দক্ষিণ পাশে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য
জগতের বাহন তাঁর বোরাককে বেঁধে রাখেন।
14) সকল নবীর সালাতের ইমামতি -
ফিলিস্তিনের বায়তুল মাকদিসেই আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম সকল নবী- রাসূলগণের সালাতের ইমামতি
করেন।
15) সালাতে মুসলিমদের প্রথম কেবলা -
মিরাজের রাতে সালাত ফরজ
হওয়ার পর মসজিদুল আকসাই ছিল মুসলমানদের প্রথম কিবলা। মুসলমানরা বায়তুল মাকদিসের দিকে
মুখ করে নামাজ পড়তেন। পরবর্তীতে আল্লাহর আদেশে কিবলা পরিবর্তন করে আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ
ঘর কাবাকে কেবলা বালানো হয়।
16) ঈসা আলাইহিস সালামের অবতরণ -
কেয়ামতের পূর্বে ঈসা আলাইহিস সালাম ফিলিস্তিনের কাছাকাছি শামের
পবিত্র শহর দামেস্কের গাওতা নামক মসজিদের মিনারে আকাশ থেকে অবতরণ করবেন।
17) দাজ্জালকে হত্যা -
ঈসা আলাইহিস সালাম দাজ্জালকে শামের বাবে লুদের কাছে হত্যা করবেন।
18) হাশরের ময়দান -
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,‘বায়তুল
মাকদিস হলো হাশরের ময়দান। পুনরুত্থানের জায়গা। তোমরা তাতে গিয়ে সালাত আদায় করো। কেননা,
তাতে এক ওয়াক্ত সালাত আদায় করা অন্যান্য মসজিদে ৫০০ সালাত আদায়ের সওয়ার।’
19) দুনিয়াতে নির্মিত দ্বিতীয় মসজিদ -
পবিত্র শহর ফিলিস্তিনে অবস্থিত পৃথিবীর দ্বিতীয মসজিদ হলো মসজিদুল আকসা। বলা হয়ে থাকে আদম আলাইহিস
সালামই মসজদটি নির্মাণ করেছেন।
আবু জর গিফারি রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু একদিন নবীজিকে বলেন, হে
আল্লাহর রাসুল! দুনিয়াতে প্রথম কোন মসজিদটি
নির্মিত হয়েছে? তিনি বলেন, মসজিদুল হারাম। তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করেন, তারপর কোনটি?
প্রতিউত্তরে তিনি বললেন, তারপর হলো মসজিদুল আকসা। এরপর তিনি জানতে চাইলেন যে, উভয়ের
মধ্যে ব্যবধান কত বছরের? তিনি বললেন চল্লিশ বছরের ব্যবধান। [সহিহ বুখারি]
20) জিয়ারতের তিনটি মাসজিদ -
পৃথিবীতে মাত্র তিনটি মসজিদ
ব্যতীত অন্য কোন স্থানে জিয়ারতের উদ্দেশ্যে
ভ্রমণ করা নিষিদ্ধ।
১) মসজিদুল হারাম, মক্কা।
২) মসজিদে নববী, মাদিনা।
৩) মসজিদুল আকসা, ফিলিস্তিন।
21) সুরা বনি ইসরাইলে আল্লাহ তাআলা মসজিদুল আকসার পরিবেশকে বরকতময়
বলেছেন।
22) সুরা আম্বিয়ায় আল্লাহ তায়ালা এই ভূখন্ডের ব্যাপারে বলেন, ‘আর
আমি তাকে ও লুতকে উদ্ধার করে নিয়ে গেলাম সেই ভূখণ্ডে, যেখানে আমি কল্যাণ রেখেছি বিশ্ববাসীর
জন্য।’
23) সুরা আরাফে আল্লাহ
তাআলা ফিলিস্তিনকে কল্যাণপ্রাপ্ত রাজ্য বলেছেন।
24) সূরা আম্বিয়ার আরেকটি আয়াতেও সুলাইমান আলাইহিস সালামের ঘটনায়
আল্লাহ তাআলা ফিলিস্তিনে কল্যাণ রেখেছেন বলে ঘোষণা দেন।
উপসংহার : -
ফিলিস্তিনের আরও অসংখ্য
ইতিহাস রয়েছে। সাহাবাদের আমলের, তাবেয়ীদের
আমলের, সালাফদের আমলের ইতিহাস, সালাহউদ্দীন আইয়ুবীর ইতিহাস। এই ভূমির কল্যাণের ব্যাপারে
রয়েছে হাদিস। এখানকার মানুষের ব্যাপারেও আছে হাদিস। এতসব কিছু ছাড়া ফিলিস্তিনের যে
অধ্যায়টি আমাদের হৃদয়ের সাথে সংযুক্ত, সেটা হলো ফিলিস্তিন হচ্ছে - শহীদদের ভূমি। এখানে
নিয়মিত সেই অমূল্য নেয়ামত লাভে ধন্য হচ্ছে মানুষ, যে নেয়ামত পেলে জীন্দেগী অতিবাহিত
করা স্বার্থক। সেই নেয়ামতের কল্যাণে যারা সেখানে বাস করে তারা মুহূর্তেই পৌঁছে যায়
জান্নাতের দোরগোড়ায়। ফিলিস্তিন ও ফিলিস্তিনের মানুষকে ভালো না বেসে কি পারা যায়?
মুসলিম উম্মার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টাই পারে ফিলিস্তিনকে মুক্ত স্বাধীন
রাষ্ট্র হিসেবে পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড় করাতে।ঘোষণা দিতে পারে শ্রেষ্ঠত্বের,"আল্লাহু
আকবার, ইসলামেই শান্তি,ইসলামই শ্রেষ্ঠ ধর্ম"।
পোস্ট ট্যাগ -
রাসূলের প্রতি ভালোবাসা হাদিস, নবীজির প্রতি ভালবাসা বই pdf, আল্লাহর
ভালোবাসার ঘটনা, ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধান কোন পথে, রাসূলের প্রতি ভালোবাসা কবিতা,
উম্মতের প্রতি রাসূলের ভালোবাসা, নবী প্রেমের উক্তি, আল্লাহর পরে রাসূল সাঃ কে সবার
উপরে মহব্বত করা ওয়াজিব