রিয়েল এস্টেট হলো একধরণের সম্পত্তি যেখানে জমি, জমির উপরে থাকা স্থাপনা, শশ্য, খনিজ, পানি, প্রাকৃতিক সম্পদ ইত্যাদি সংযুক্ত থাকবে। সহজ ভাষায় নির্দিষ্ট মালিকানাধীন সকল বাস্তব সম্পদই রিয়েল এস্টেট। এজাতীয় সম্পদ কেনা, বেচা, ভাড়া দেওয়ার পেশাকে রিয়েল এস্টেট ব্যবসা বলে।
রিয়েল এস্টেট ব্যবসার আইডিয়া ও পরামর্শ : -
বর্তমান সময়ে রিয়েল এস্টেট খুব জনপ্রিয় একটি ব্যবসা । মানুষের আবাসনের চাহিদাকে বিবেচনা ও পুঁজি করে রিয়েল এস্টেট ব্যবসা বিশ্বে আত্মপ্রকাশ করেছে।
আধুনিক সময়ে উদ্যোক্তাদের কাছে রিয়েল এস্টেট একটি সম্ভাবনাময় ব্যবসা। মানুষের মৌলিক চাহিদার অন্যতম হলো বাসস্থান।বিলাসবহুল বাসা, ডুপ্লেক্স বাড়ি, ছোট ফ্ল্যাট, অফিস ভবন, গুদাম, দোকান ইত্যাদি প্রয়োজনীয় চাহিদাগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে রিয়েল এস্টেট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে। বাসা ভাড়া, রিয়েল এস্টেট উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় মালামাল সরবরাহ ও পরামর্শ দিয়ে অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান ও স্বাবলম্বী হওয়া যায়।
নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগ কীভাবে শুরু করবেন, সফলতা কিভাবে আসবে,সমস্যা,সমাধান ও সম্ভাবনা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ ।
১) অল্প পরিসরে শুরু করুন :
রিয়েল এস্টেট শিল্পে প্রাথমিকভাবে অল্প পরিমাণ মূলধন বিনিয়োগ করে ব্যবসা শুরু করা উত্তম। অভিজ্ঞতা অর্জন করা ব্যতীত কখনোই আপনি আপনার সমস্ত মূলধন প্রাথমিক অবস্থায় বিনিয়োগ করবেন না।
কারো বাসা মেরামত, ছোট ফ্ল্যাট বা দোকান নির্মাণের কাজ দিয়ে শুরু করে অভিজ্ঞতা অর্জন করে বড় আকারের রিয়েল এস্টেট কোম্পানির সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার চেষ্টা করুন।
কারণ রিয়েল এস্টেট শিল্পে সফলতা অর্জন করতে হলে আপনাকে প্রচুর অভিজ্ঞ হতে হবে।
অভিজ্ঞতার পাশাপাশি আস্তে আস্তে মূলধন বৃদ্ধি করুন।এভাবে একদিন দেখবেন আপনি নিজেই কোনো বিখ্যাত রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়ে উঠেছেন।
২) চিন্তা ও স্বপ্নকে বড় করুন :
রিয়েল এস্টেট শিল্পে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে আপনাকে বড় বড় স্বপ্ন দেখতে জানতে হবে। "স্বপ্ন সেটা নয় যা মানুষ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখে, বরং স্বপ্ন হচ্ছে তা,যা অর্জনের জন্য পেরেশানি আপনাকে ঘুমোতে দেয় না"।
এ শিল্পে মূলধন কম কিংবা বেশি তার চেয়ে বেশি মূখ্য আপনি কতো বড় বড় চিন্তা করতে ও স্বপ্ন দেখতে পারেন।
রিয়েল এস্টেট শিল্পে অনেক সফল উদ্যোক্তাকেই দেখা যায়, যারা নামেমাত্র পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলেন, কিংবা কর্মী হিসেবে
রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু করেছিলেন; আর এখন নিজেই কোনো রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়ে গেছেন। এরা প্রত্যেকেই বড় বড় চিন্তা করতে ও স্বপ্ন দেখতে পারতেন।
৩) অর্থনীতির জ্ঞান অর্জন করুন : -
লাভ, ক্ষতি, হিসাব নিকাশ সম্পর্কীয় বিষয়ে দূরদর্শিতা সফলতা অর্জনের চাবিকাঠি।
অর্থনীতির জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে,"প্রকল্পে সম্ভাব্য খরচ,লাভ লস,বাজার মূল্য হিসেব করে কাজে হাত দেয়া। তাই রিয়েল এস্টেট শিল্পে উদ্যোক্তা হতে হলে অর্থনীতি বিষয়ে বাস্তব জ্ঞান অর্জন করতে হবে।
৪) আগে শিখুন তারপর উপার্জন করুন :
রিয়েল এস্টেট শিল্পে
আগে কাজ শিখতে হবে, তারপর উপার্জন করার কথা চিন্তা করতে হবে। তাই কাজ শিখুন ও অভিজ্ঞতা অর্জন করুন, দেখবেন আপনি ক্রমশ সফলতা পাচ্ছেন।
৫) আজই শুরু করুন :
সঠিক উপায়ে ব্যবসা করতে আস্তে আস্তে শিখতে হবে ও অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে। ক্রমাগত অভিজ্ঞতা ও সফলতা অর্জনের প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
৬) লাভের প্রতি লক্ষ্য রাখুন :
ব্যবসা শুরুর প্রথম থেকেই লাভের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে। প্রথম দিকে তেমন লাভ না হলেও, খেয়াল রাখতে
হবে যেনো কোনভাবেই ক্ষতির সম্মুখীন না হয়। তারপর ধীরে ধীরে লাভ করার প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে।ব্যবসায় লাভ না করতে পারলে, কখনোই সফল উদ্যোক্তা হিসেবেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব হবে না।
পরামর্শগুলোর প্রতি খেয়াল রেখে যেকোনো ব্যক্তি রিয়েল এস্টেট শিল্পে উদ্যোক্তা হওয়ার
স্বপ্ন দেখতে পারেন।
রিয়েল এস্টেট ব্যবসার ধারনা : -
রিয়েল এস্টেট একটি যুগান্তকারী ব্যবসা ক্ষেত্র। এ সেক্টরটি হাউজিং শিল্পের লাভজনক ও নির্ভরযোগ্য ব্যবসা। বিগত কয়েক বছর যাবত এই শিল্পটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রে হিসেবে উঠে এসেছে। সুন্দরভাবে বসবাসের জন্য বিলাসী ঘর, ডুপ্লেক্স বাড়ি, ছোট ফ্ল্যাট, অফিস ভবন, গুদাম ইত্যাদি মানুষের নিত্যকার প্রয়োজনীয় স্থাপনা। মানুষের এই প্রয়োজনীয় চাহিদাগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে আপনিও গড়ে তুলতে পারেন একটি রিয়েল এসেস্টট বিজনেস সেক্টর।
দিনে দিনে সকল পর্যায়ে উদ্যোক্তাদের নিকট এ ব্যবসাটির গুরুত্ব ও তাৎপর্য ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দারুণ সম্ভাবনাময় এই রিয়েল এস্টেট ব্যবসাটি সম্পর্কে নিম্নে সুস্পষ্ট
ধারণা দেওয়া হল: -
রিয়েল এস্টেট ডেভেলপমেন্ট বা কনসট্রাকশন -
ডেভেলপমেন্ট একটি বহুমুখী ব্যবসা ক্ষেত্র। ডেভেলপমেন্ট মূলত নতুন ভবন নির্মাণ, জমি ক্রয়-বিক্রয়, পুরাতন ভবন পুন:নির্মাণ ইত্যাদি কাজ। সম্ভ্যাব্যতা যাচাই করে এ ব্যবসাটি করতে পারলে
অর্থনৈতিক উন্নতি লাভ করা সম্ভব ।
১) রিয়েল এস্টেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানী : -
ব্যবসার ক্ষেত্র
রিয়েল এস্টেট ম্যানেজমেন্ট একটি সম্প্রসারিত ব্যবসা। এ ব্যবসাটি খুবই চ্যালেজ্ঞিং ও লাভজনক।
২) মূল্যায়ন বা মূল্য নির্ধারণ সার্ভিস : -
প্রর্পাটির মূল্য নির্ধারণ, রিয়েল এস্টেট মূল্যায়ন, জমির মূল্য নির্ধারণ ইত্যাদি এ সেক্টরের অন্যতম ব্যবসাক্ষেত্র।
এক্ষেত্রে আপনার কাজ হবে কোনো সম্পত্তি বা স্থাপনার সঠিক মূল্যমান বিশ্লেষণের মাধ্যমে গ্রাহককে সঠিকভাবে জমিটি মূল্যায়নে সহায়তা করা। ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েই আপনার নিকটি হতে এ সেবাটি গ্রহণ করতে পারে। আপনি ইচ্ছা করলেই মূল্যনির্ধারক হিসেবে ক্যারিয়ার বিল্ডআপ করতে পারেন।
৩) রিয়েল এস্টেট ব্লগিং :-
ব্যবসায়ী বা অন্যান্য কলাকুশলীদের জন্য একটি ব্লগিং সাইট তৈরী করে আপনি সেবা এবং আয় শুরু করতে পারেন। উন্নয়ন ও অন্যান্য তথ্য সরবরাহ করে রিয়েল এস্টেট সাইটটি আপডেট করুন। কাস্টমার ও ক্লায়েন্টদের জন্য আপনার ব্লগে বিভিন্ন মতামত ও উপদেশ দিয়ে সেবাটি প্রদান করতে পারেন।
৪) আর্কিটেকচার : -
ভবনের নকশা ও কাঠামা ডিজাইন করার মতো দক্ষতা থাকলে আপনি এ সম্মাজনক পেশাটি শুরু করতে পারেন। প্রাথমিকভাবে
স্থাপনা অংকন, ঘরের নকশা প্রণয়ন ও অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়ন করুন।
৫) অনলাইন মার্কেটি : -
এই শিল্পে আরেকটি পপুলার ওয়ে হলো রিয়েল এস্টেট কোম্পানী বা এজেন্টদের অনলাইন মার্কেটিং সেবা প্রদান করা। রিয়েল এস্টেট সম্পর্কে আপডেট নিউজ গুলো প্রচার করে সহজেই এ ব্যবসাটি শুরু করা যায়। সোশাল মিডিয়া, ফেইসবুক গ্রুপে গ্রাহকদের নিকট এই সেবা পৌঁছে দেয়া সহজ । অনলাইন মার্কেটিং সম্পর্কে আইডিয়া থাকলে
এ সেক্টরে নিজেকে দারুণভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন।
৬) প্রর্পাটি স্টাইলিং : -
রিয়েল এস্টেট শিল্পে স্মার্ট ও যুগোপযোগী ব্যবসা হলো প্রর্পাটি স্টাইলিং। প্রর্পাটি স্টাইলিশরা মূলত বিক্রয় বা ভাড়ার জন্য বিল্ডিং অথবা স্থাপনাকে প্রস্তুত করে। এটি একটি চাহিদাবহুল ব্যবসার আইডিয়া।
৭) রেন্যুভেশন ও রিপেয়ার : -
রিয়েল এস্টেট শিল্পে রেন্যুভেশন ও রিপেয়ারিং কে মহান পেশা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অন্যান্য আকস্মিক দূর্ঘটনায় অনেক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে।বাড়িঘর ও স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে। এসব বাড়িঘর মেরামত ও নির্মাণের মাধ্যমে
সহজেই জীবিকা নের্বাহ করা যায়।
৮) পার্সোনালাইজড সার্ভিস : -
বর্তমানে পার্সোনালাইজড সার্ভিস ব্যবসাটি একটি লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া । গ্রাহকদের চাহিদা মাথায় রেখে বাড়ির জন্য মানানসই রং, অবকাঠামো ও প্রয়োজনীয় উপকরণ সুবিধা গুলো নিয়ে গ্রাহকদের পরামর্শ প্রদান করে এ ব্যবসাটি পরিচালনা করা যায়।
৯) রিয়েল এস্টেট এজেন্সি : -
ক্রেতা ও বিক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী তাদের মধ্যে মধ্যস্থতা করা। যারা প্রর্পাটি বিক্রয় করতে আগ্রহী
তাদের একটি তালিকা তৈরী করে, উপযুক্ত
ক্রেতা খুঁজে বের করে এ ব্যবসাটি করা যায়।
***) ভাববার বিষয় :-
রিয়েল এস্টেট সেক্টরটি ব্যবসার জন্য অত্যন্ত লাভজনক ও সৌখিন ব্যবসা। দুঃখজনক হলেও সত্য এ সেক্টরে সৎ মানুষ গুলো না আসার কারণে সেক্টরটি দুর্বৃত্তদের হাতে জিম্মি। সমাজের সৎ ও যোগ্য মানুষ গুলো এই সেক্টরে আসলে এ সেক্টরটি হবে একটি সম্ভাবনাময় আস্থার জায়গা।
করণীয় :-
১) সততা ও সুনাম অর্জন করতে কথা কাজে মিল রেখে পুঁজি ও পরিশ্রমের সমন্বয় ঘটাতে হবে ।
২) বর্তমানে এ ব্যবসা প্রথম শ্রেণীর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও দালালদের দখলে। সততা ও আস্থার সমন্বয়ে ঘটিয়ে
প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে সকল ক্ষেত্রে যোগ্যতার পরিচয় দিতে হবে।সৃষ্টিগত ভাবেই মানুষ সত্যকে গ্রহণ করে মিথ্যাকে বিতাড়িত করবে।
৩) সমাজের প্রতিষ্ঠিত শ্রেণীর সাথে সু-সম্পর্ক বজায় রেখে অসৎ পেশী শক্তিকে বিবেচনায় রেখে কর্মকৌশল নির্ধারণ করতে হবে।
এই সেক্টরে যোগ্যতা অর্জন করে হয়ে উঠুন একজন সফল ব্যবসায়ী। প্রতিটি মানুষের লালিত স্বপ্ন সারা জীবনের উপার্জন দিয়ে একটি নিরাপদ আবাসন গড়া। আপনি হোন তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের কারিগর।
পোস্ট ট্যাগ -
রিয়েল এস্টেট ব্যবসার লাইসেন্স, রিয়েল এস্টেট কোম্পানির নাম,
রিয়েল এস্টেট ব্যবসা বই,
রিয়েল এস্টেট ব্যবসা কিভাবে শুরু করতে হয়, রিয়েল এস্টেট মানে কি, রিয়েল এস্টেট কোম্পানির কাজ কি, রিয়েল এস্টেট মার্কেটিং কি, রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার