সৃষ্টিগত ভাবেই সম্মান, সম্পদ ও রাজত্বকে শিক্ষার সাথে জুড়ে দেয়া
হয়েছে।সঠিক মানের শিক্ষা গ্রহণ করলে সম্মান সম্পদ অর্জিত হবেই। সিঙ্গাপুর দেশটিতে
এক ছটাক চাষের জমি নেই, অথচ শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে আজ তারা উন্নত দেশের তালিকায়। শিক্ষার
গুণগত মানে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সিঙ্গাপুরের অবস্থান শীর্ষে।
রাষ্ট্র পরিচালনা ও উন্নত জাতি গঠনে শিক্ষা অপরিহার্য :-
শিক্ষাব্যবস্থাকে সঠিক
কাঠামোর মধ্যে সাজাতে হবে। দেশ কত উন্নত হবে অথবা রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ কতটুকু উন্নয়নের
পথে এগিয়ে যাবে তা নির্ভর করে শিক্ষা সংক্রান্ত
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের উপর ।শিক্ষা ও শিক্ষার মান দুটোকেই সঠিক তাৎপর্যে উন্নীত এবং নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
মানসম্মত ও গুণগত শিক্ষা
জরুরী : -
বর্তমানে বহুল আলোচিত বিষয়
-"মানসম্মত ও গুণগত শিক্ষা"। শিক্ষা দেওয়া ও গ্রহণ করা শুধু নয়,জনগণকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হলে প্রয়োজন মানসম্মত শিক্ষা। তাই শিক্ষার মান উন্নয়ন
জরুরী । শিক্ষার মান উন্নয়ন করা গেলে দেশের
সকল সেক্টরে উন্নয়ন ও অগ্রগতি হবেই।
দেশের বর্তমান শিক্ষার
প্রেক্ষাপট : -
শিক্ষার গুণগত মান কতটা বজায় রয়েছে? প্রশ্নটি অযৌক্তিক নয়। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার
উন্নয়ন ও প্রতিটি নাগরিকের শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে
। তারপরও যেন কোথাও শূন্যতা ও প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে ।
শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত
শিশু :-
শিক্ষাকে সকলের কাছে পৌঁছে দেবার কথা থাকলেও অনেক ছেলে মেয়েরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। প্রাথমিক
স্তরে ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা
গেলেও মাধ্যমিক স্তর শেষ হওয়ার আগেই এরা ঝরে পড়ে যায়।
জীবিকার সন্ধানে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে তাদের শিক্ষাজীবনের ইতি টানতে
বাধ্য হয়। আবার শিক্ষার গন্ডি পেরিয়ে চাকরির অপেক্ষায় থাকা বেকারত্বের অভিশাপ শিক্ষিতদের
উন্নত ক্যারিয়ার গড়ার পথে বাধা। শিক্ষার
গুণগতমান নিশ্চিত করা গেলে, শিক্ষাকে কাজে
লাগিয়ে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী নিজেদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে আগ্রহী হবে ।
কারিগরি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা
:-
সমকালীন চাহিদার প্রেক্ষিতে প্রথাগত শিক্ষার চেয়ে কারিগরি শিক্ষার
গুরুত্ব অপরিসীম। তাই শিক্ষাকে উন্নত কারিগরি
শিক্ষার প্যাটানে সাজানো জরুরি।
জনগণের দুটো হাতকে দক্ষ কারিগরের হাতে রূপান্তরিত করতে পারলে দেশের
অর্থনৈতিক উন্নতি অবসম্ভাবী।
জিপিএ-৫ ও কার্যকরী জ্ঞানের
সমন্বয় জরুরী : -
শিক্ষার গুণগত মানের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা কতটুকু উপকৃত হচ্ছে?
শুধুমাত্র জিপিএ-৫ ও পাশ করা শিক্ষার্থীরা স্তরভিত্তিক যোগ্যতা কতটুকু অর্জন করতে পারছে
তা ভেবে দেখা জরুরী।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী
শিক্ষা খাতে জাতীয় বাজেটের কমপক্ষে বিশ শতাংশ বা জিডিপির ছয় শতাংশ বরাদ্দের কথা বলা
আছে। জাতীয় বাজেটের হিসাবে জিডিপির বরাদ্দ আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের চেয়ে কম।
বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে
তাল মিলিয়ে বাজেটের আকার বড করলেও শিক্ষাখাতে বরাদ্দ অপ্রতুল। শিক্ষাবিদরা এ অপ্রতুল বরাদ্দকে গুণগতমানের শিক্ষাব্যবস্থা
এবং সামগ্রিক উন্নয়নের প্রধান অন্তরায় বলে মনে করেন । উন্নত দেশগুলোর শিক্ষা বাজেট
আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের চেয়েও অনেক বেশি।
তারা ত্রিশ থেকে পয়ত্রিশ শতাংশ বরাদ্দ দেয় শিক্ষাখাতে, আর আমাদের
দেশে বরাদ্দ দেওয়া হয় মাত্র পনের শতাংশ। এজন্যে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে যে পরিমাণ দক্ষ ও সৃজনশীল জনবল প্রয়োজন ছিলো
তা আমরা এখনো গডে তুলতে পারিনি।
টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্র
নির্ধারণ :-
টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা
হলো জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা। যার মাধ্যমে মানবসম্পদ সৃষ্টি ও টেকসই উন্নয়ন অর্জন করা সম্ভব। প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত,
দক্ষ, কর্মঠ, প্রগতিশীল ও উদ্ভাবনী চেতনার মানবসম্পদ দ্বারাই এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হতে পারে। বর্তমানে দক্ষ ও সৃজনশীল জনশক্তি গডতে প্রয়োজন আধুনিক
প্রযুক্তি সম্বলিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অর্থাভাবে আমাদের দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলো
এখনো আধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধি হয়নি।
জাতীয় জীবনে শিক্ষার গুরুত্ব
:-
জাতীয় জীবনে শিক্ষার গুরুত্ব বিবেচনায় শিক্ষাকে জাতির মেরুদণ্ড
বলা হয়েছে। শিক্ষাই জাতিয় উন্নতির পূর্বশর্ত। জাতীর সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি এবং টেকসই উন্নয়ন
অধিকাংশই শিক্ষাব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল। সঠিক শিক্ষা ছাডা কৃষি, সেবা, স্বাস্থ্য,
সামাজিক উন্নয়ন সহ সকল খাতে গুণগত প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব নয়। দুর্ভাগ্যজনক হলেও
সত্য আমরা প্রত্যাশিত মানের শিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে সার্বিক ভাবে পিছিয়ে রয়েছি।
শিক্ষা খাতে পর্যাপ্ত বাজে নির্ধারণ : -
পৃথিবীতে এমন কোন দেশ নেই,
যারা কম জিডিপি বরাদ্দ রেখে শিক্ষায় উন্নত হয়েছে। উন্নত দেশগুলোতে গবেষণা ও উন্নয়ন
নামে আলাদা একটা খাত রয়েছে, যা শিক্ষাখাতের বাইরে।
বাজেট স্বল্পতার কারণে
দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নতুন উদ্ভাবন ও গবেষণা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।এজন্য অর্থনৈতিক
ভাবে সচ্ছল বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাডি জমাচ্ছে, যা প্রমাণ
করে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে উচ্চশিক্ষায় আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর এবং পরিবেশবান্ধব
কাঠামোর অপ্রতুলতা।
বেকারত্ব দূরীকরণ কার্যকরী
পদক্ষেপ গ্রহণ : -
উচ্চ শিক্ষিত বিপুলসংখ্যক
শিক্ষার্থী আজ হতাশা ও বেকারত্বের জাঁতাকলে পিষ্ট। বেকারত্বের গ্লানিময় অন্ধকারে নিমজ্জিত
ভবিষ্যতের চিন্তায় অনেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী
আজ আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে,যা দেশের মানবসম্পদ উন্নয়নের পথে অন্তরায়। শ্বাসরুদ্ধকর
এ অবস্থার অবসান ঘটিয়ে শিক্ষাখাতে পর্যাপ্ত
বরাদ্দ বৃদ্ধি ও আধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ পরিবেশবান্ধব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা।
সময়োপযোগী শিক্ষক প্রশিক্ষণ
: -
দেশের শিক্ষাব্যবস্থা-
কে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে বাজেটের পাশাপাশি
সময় উপযোগী শিক্ষক প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষার্থীদের
সৃজন শীল পদ্ধতির ওপর পাঠদানে সুশৃঙ্খল পরিবেশ নিশ্চিত করা প্রয়োজন ।
আধুনিক বিশ্ব যেহেতু তথ্য-প্রযুক্তি
নির্ভর, তাই শিক্ষা ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানে গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থা
সম্প্রসারণশীল হলেও শিক্ষার গুণগত মানে ক্রমাগত অবনতি ঘটছে। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষার
মান সময়োপযোগী রাখা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষক
তৈরীর কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ : -
বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার
জন্য পর্যাপ্ত তহবিল বরাদ্দ থাকলেও অনেক সময় অধিক সংখ্যক ক্লাসের কারণে
বিশ্ববিদ্যালয়ে তেমন কোনো ভাল মানের গবেষণা হয় না।সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে
গবেষণার পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়
মঞ্জুরি কমিশন হতে বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট পাওয়া যায়।
তবে এইসবের কতটুকু গবেষণায় ব্যয় হয় তা সন্দেহ জনক।
সুষ্ঠ পরিকল্পনা গ্রহণ
: -
শিক্ষার মান উন্নয়নের প্রতি দৃষ্টিপাত করা ও শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে
আনার জন্য সুষ্ঠ পরিকল্পনা গ্রহণ সময়ের দাবি।
শিক্ষার মান উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি
অভিভাবকদেরও দায়িত্ব গ্রহণ করা প্রয়োজন।
শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতিকে না বলুন। সন্তানের মেধা ও দক্ষতা অনুযায়ী স্বাআনন্দে শিক্ষা গ্রহণের অনুকূল পরিবেশ দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের
মানসম্মত ও গুণগত মানের শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ
সৃষ্টি করতে হবে। সৃষ্টিগত ভাবেই মেধাবী দেশের
জনগোষ্ঠীকে দক্ষ মানব সম্পদে পরিণত করার সুষ্ঠ ও সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে
পারলে বাংলাদেশের নাম উঠে আসবে উন্নত দেশের তালিকায় ইংশা'আল্লাহ।
উপসংহার : -
শিক্ষার অবস্থা, প্রযুক্তি, উন্নয়ন ও উদ্ভাবনসহ সার্বিক শিক্ষা
খাতে বাংলাদেশের অবস্থান হতাশা ব্যঞ্জক। বৈশ্বিক জ্ঞান সূচকের (গ্লোবাল নলেজ ইনডেক্সের) তালিকায় দক্ষিণ
এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান
সবচেয়ে নিচে। মেধায়- সম্পদে ভরপুর একটি স্বাধীন দেশ এভাবে পিছিয়ে থাকবে এটি
কারোই কাম্য হতে পারেনা।প্রয়োজন দক্ষ, দেশপ্রেমিক, যোগ্যতা সম্পন্ন মেধাবীদের কে নিয়ে
শক্তিশালী শিক্ষা কমিশন গঠন করে সঠিক পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করা ।তবেই বাংলাদেশ উঠে
আসবে তার কাঙ্খিত সফলতায়।
পোস্ট ট্যাগ -
শিক্ষা নিয়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতা, বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা দর্শন pdf,
বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা দর্শন রচনা, বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার কুফল, বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার
সুফল, বিতর্ক প্রতিযোগিতার বিষয় সমূহ, স্কুল বিতর্ক প্রতিযোগিতার বিষয়, বিতর্ক প্রতিযোগিতার
নিয়ম