[সহীহ বুখারী: ১৩৫৮]।
আমরা ফিলিস্তিনকে ভালোবাসি কারণ ...
বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা দিন দিন যেভাবে অপসংস্কৃতি, অনৈতিকতা এবং চরিত্র বিধ্বংসী কাজের দিকে ধাবিত হচ্ছে, সেখানে আমাদের সন্তানের উপর যেসব দায়িত্ব আছে তা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পালন করা জরুরী। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশিত পন্থায় সন্তানকে লালন-পালন করা ঈমানের অন্যতম দাবী। আমাদের উপর সন্তানদের যে হকগুলো রয়েছে তা এখানে আলোচনা করা হলো:
عَنْ عُبَيْدِ اللهِ بْنِ أَبِي رَافِعٍ ، عَنْ أَبِيهِ ، قَالَ
: رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم «أَذَّنَ فِي أُذُنِ الْحَسَنِ بْنِ عَلِيٍّ
حِينَ وَلَدَتْهُ فَاطِمَةُ بِالصَّلاَةِ».
আবূ
রাফে রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,আমি রাসুলুল্লাহ( সাঃ) কে হাসন ইবনে
আলীর কানে আযান দিতে দেখেছি।
[সুনান
আবূ দাউদ:৫১০৫]
[আবু
দাউদ ৪৯৫২-৪৯৬১]
হাদীসে
এসেছে: -
عَنْ سَمُرَةَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
قَالَ: «كُلُّ غُلَامٍ رَهِينَةٌ بِعَقِيقَتِهِ تُذْبَحُ عَنْهُ يَوْمَ السَّابِعِ
وَيُحْلَقُ رَأْسُهُ»
সামুরা
রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সকল নবজাতক তার আক্বিকার সাথে আবদ্ধ। জন্মের সপ্তম দিন তার পক্ষ থেকে জবেহ করা হবে। ঐ দিন তার
নাম রাখা হবে। আর তার মাথার
চুল কামানো হবে।
[সুনান
আবূ দাউদ: -২৮৩৮]
[সুনান
আত-তিরমিযী: ১৫১৯]
এছাড়া
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিশুদেরকে খেজুর দিয়ে তাহনীক ও বরকতের জন্য
দো‘আ করতেন।
[সহীহ
বুখারী: ৩৯০৯; মুসলিম: ২১৪৬]
عَنْ جَابِرٍ قَالَ : «عَقَّ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم
عَنِ الْحَسَنِ وَالْحُسَيْنِ وَخَتَنَهُمَا لِسَبْعَةِ أَيَّامٍ».
জাবির
রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান এবং হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুমার সপ্তম দিবসে আকীকা এবং খাতনা করিয়েছেন।
[আল-মু‘জামুল আওসাত:
৬৭০৮]
‘হে
বৎস! আমি তোমাকে কয়েকটি বাক্য শিখাতে চাই। তুমি আল্লাহর অধিকারের হেফাযত করবে, আল্লাহও তোমার হেফাযত করবেন। তুমি আল্লাহর অধিকারের হেফাযত করবে, তুমি তাঁকে সর্বদা সামনে পাবে। যখন কোন কিছু চাইবে তখন আল্লাহর কাছেই চাইবে। আর যখন সহযোগিতা
চাইবে তখন আল্লাহর কাছেই চাইবে। আর জেনে রাখ!
যদি পুরো জাতি যদি তোমার কোন উপকার করার জন্য একতাবদ্ধ হয়, তবে তোমার কোন উপকার করতে সমর্থ হবে না, শুধু ততটুকুই করতে পারবে যতটুকু আল্লাহ তোমার জন্য লিখে রেখেছেন। আর যদি পুরো
জাতি যদি তোমার কোন ক্ষতি করার জন্য একতাবদ্ধ হয়, তবে তোমার কোন ক্ষতি করতে সমর্থ হবে না, শুধু ততটুকুই করতে পারবে যতটুকু আল্লাহ তোমার জন্য লিখে রেখেছেন। কলমের লিখা শেষ হয়েছে এবং কাগজসমূহ শুকিয়ে গেছে।
[তিরমিযী:
২৫১৬]
আলী
রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তোমরা তোমাদের সন্তানদের তিনটি বিষয় শিক্ষা দাও।
তন্মধ্যে
রয়েছে তাদেরকে কুরআন তিলাওয়াত শিক্ষা ও কুরআনের জ্ঞান
দাও।
[জামিউল
কাবীর]
কুরআন
শিক্ষা দেয়ার চেয়ে উত্তম কাজ আর নেই। উসমান
রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْآنَ وَعَلَّمَهُ»
‘‘তোমাদের
মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সেই যে নিজে কুরআন
শিক্ষা করে ও অপরকে শিক্ষা
দেয়।’’
[সহীহ
বুখারী: ৫০২৭]
[সুনান
আবূ দাউদ: ৪৯৫]
কু-সংস্কারাচ্ছন্ন সমাজের প্রচলিত কথা
[সূরা
লুকমান: ১৮,১৯]
[সহীহ
বুখারী: ৫৯৯৭]
হাদীসে
এসেছে:-
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى الله
عَليْهِ وسَلَّمَ : «طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ»
আনাস
বিন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক মুসলিমের উপর জ্ঞানার্জন করা ফরয। [সুনান ইবন মাজাহ: ২২৪]
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ هَلْ لِي مِنْ
أَجْرٍ فِي بَنِي أَبِي سَلَمَةَ أَنْ أُنْفِقَ عَلَيْهِمْ وَلَسْتُ بِتَارِكَتِهِمْ
هَكَذَا وَهَكَذَا إِنَّمَا هُمْ بَنِيَّ قَالَ: «نَعَمْ لَكِ أَجْرُ مَا أَنْفَقْتِ
عَلَيْهِمْ»
উম্মে
সালামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি জিজ্ঞাসা করলাম আবূ সালামার সন্তানদের জন্য আমি যদি খরচ করি এতে কি আমার জন্য
প্রতিদান রয়েছে? নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ যতদিন তুমি খরচ করবে ততদিন তোমার জন্য প্রতিদান থাকবে।
[সহীহ
বুখারী: ৫৩৬৯]
«إِنَّكَ أَنْ تَدَعَ وَرَثَتَكَ أَغْنِيَاءَ خَيْرٌ مِنْ أَنْ
تَدَعَهُمْ عَالَةً يَتَكَفَّفُونَ النَّاسَ فِي أَيْدِيهِمْ»
তোমাদের
সন্তান সন্ততিদেরকে সক্ষম ও সাবলম্বি রেখে
যাওয়া, তাদেরকে অভাবী ও মানুষের কাছে
হাত পাতা অবস্থায় রেখে যাওয়ার চেয়ে উত্তম।
[সহীহ
বুখারী:১২৯৫]
[জামিউল
কাবীর]
﴿قُلۡ هَٰذِهِۦ سَبِيلِيٓ أَدۡعُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِۚ عَلَىٰ بَصِيرَةٍ
أَنَا۠ وَمَنِ ٱتَّبَعَنِيۖ وَسُبۡحَٰنَ ٱللَّهِ وَمَآ أَنَا۠ مِنَ ٱلۡمُشۡرِكِينَ
١٠٨﴾ [يوسف:108]
‘ বল,
‘এটা আমার পথ। আমি জেনে-বুঝে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেই এবং যারা আমার অনুসরণ করেছে তারাও। আর আল্লাহ পবিত্র
মহান এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত নই’।
[সূরা
ইউসুফ : ১০৮]
সন্তানকে
দ্বীনের পথে পরিচালনার মাধ্যমে সওয়াব অর্জন করার এক বিরাট সুযোগ
রয়েছে। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বললেন:-
«فَوَاللَّهِ لَأَنْ يُهْدَى بِكَ رَجُلٌ وَاحِدٌ خَيْرٌ لَكَ مِنْ
حُمْرِ النَّعَمِ»
তোমার
মাধ্যমে একজনও যদি হিদায়াতপ্রাপ্ত হয়, তবে তা হবে তোমার
জন্য লাল বর্ণের অতি মূল্যবান উট থেকেও উত্তম।
[সহীহ
বুখারী]
[সহীহ
বুখারী: ২৫৮৭]
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ قُوٓاْ أَنفُسَكُمۡ وَأَهۡلِيكُمۡ
نَارٗا ﴾ [التحريم:6]
"হে
ইমানদারগণ! তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবারবর্গকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও।"
[সূরা
আত-তাহরীম: ৬]
"আর
কাফিররা বলবে, ‘হে আমাদের রব,
জ্বিন ও মানুষের মধ্যে
যারা আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছে তাদেরকে আমাদের দেখিয়ে দিন। আমরা তাদের উভয়কে আমাদের পায়ের নীচে রাখব, যাতে তারা নিকৃষ্টদের অন্তর্ভুক্ত হয়।"
[সূরা
হা-মীম আসসিজদাহ: ২৯ ]
আল্লাহ
বলেন: "হে মুমিনগণ, তোমাদের
স্বামী-স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিদের
কেউ কেউ তোমাদের দুশমন। অতএব তোমরা তাদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন কর। আর যদি তোমরা
মার্জনা কর, এড়িয়ে যাও এবং মাফ করে দাও তবে নিশ্চয় আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, অসীম দয়ালু।"
[সূরা
তাগাবুন-১৪]
হাদীসে
এসেছে: -
ইবনে
আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলে করীম রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরুষের বেশ ধারণকারী নারী ও নারীর বেশ
ধারণকারী পুরুষকে অভিসম্পাত করেছেন। [সহীহ বুখারী:৫৮৮৫]
আব্দুল্লাহ
ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم
« مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ ».
‘যে
ব্যক্তি অন্য জাতির সাথে সা-দৃশ্যতা রাখবে
সে তাদের দলভুক্ত বলে গণ্য হবে।
[সুনান
আবূ দাউদ:৪০৩১]
﴿ وَٱلَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا هَبۡ لَنَا مِنۡ أَزۡوَٰجِنَا
وَذُرِّيَّٰتِنَا قُرَّةَ أَعۡيُنٖ وَٱجۡعَلۡنَا لِلۡمُتَّقِينَ إِمَامًا ٧٤ ﴾ [الفرقان:
74]
"আল্লাহর
নেক বান্দা তারাই যারা বলে, হে আমাদের রব,
আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান
করুন যারা আমাদের চক্ষু শীতল করবে। আর আপনি আমাদেরকে
মুত্তাকীদের নেতা বানিয়ে দিন।"
[সূরা
আল ফুরকান: ৭৪]
﴿ هُنَالِكَ دَعَا زَكَرِيَّا رَبَّهُۥۖ قَالَ رَبِّ هَبۡ لِي مِن
لَّدُنكَ ذُرِّيَّةٗ طَيِّبَةًۖ إِنَّكَ سَمِيعُ ٱلدُّعَآءِ ٣٨ ﴾ [ آل عمران:38]
‘হে
আমার রব, আমাকে আপনার পক্ষ থেকে উত্তম সন্তান দান করুন। নিশ্চয় আপনি প্রার্থনা শ্রবণকারী’।
[সূরা
আল-ই ইমরান ৩৮]
আমরা কি সন্তানের হকগুলো পালন করতে পেরেছি ? আসুন, আমরা আমাদের সন্তানদেরকে নেকসন্তান হিসাবে গড়ে তুলি। যে সম্পর্কে হাদিসে এসেছে:
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم-
قَالَ « إِذَا مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ ثَلاَثَةٍ
إِلاَّ مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ»
আবু
হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তার যাবতীয় আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে ৩টি আমল বন্ধ হয় না:-
ক) সদকায়ে জারিয়া
খ)
এমন জ্ঞান-যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায়
গ)
এমন নেক সন্তান- যে তার জন্য
দো‘আ করে
[সহিহ
মুসলিম:১৬৩১]