উৎকর্ষতা এবং ক্রমাগত উদ্ভাবনের বিংশ শতাব্দীতে ড্রোন প্রযুক্তি
এক মহাআবিষ্কার। ড্রোন শিল্প এখন ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। অবিশ্বাস্য
সফলতা নিয়ে আসছে প্রযুক্তি। আজকের আর্টিকেলে ড্রোন প্রযুক্তির খুঁটিনাটি বর্ণনা করা হলো ।
ড্রোন কি :-
ড্রোন মূলত একটি ইংরেজি শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ গুঞ্জন বা পুরুষ মৌমাছি। এর এমন নামকরণের যুক্তি কথা হচ্ছে
এটি যখন উড়ে মৌমাছির মত গুনগুন শব্দ করে। গেজেটটিও মৌমাছির মত কাজ করে। পারিভাষিক
অর্থে বলা যায় "ড্রোন হচ্ছে একটি উড়ন্ত রোবট"-যা রিমোট কন্ট্রোল বা অটোমেটিক
সিস্টেমে কন্ট্রোল করা যায়। বর্তমানে কিছু ড্রোন বাজারে এসেছে যেগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে
উড়ে এবং কমান্ড অনুযায়ী এর দ্বারা কাজ করাতে
সক্ষম।
পূর্বে শুধুমাত্র সামরিক কাজে ড্রোন ব্যবহার করলেও বর্তমানে ড্রোন
দিয়ে ভিডিও শুট, খাবার ডেলিভারি থেকে শুরু করে
বিভিন্ন ধরনের কাজ করানো হয়।
ড্রোন কিভাবে কাজ করে :
-
ড্রোন মূলত একটি ইলেকট্রনিক্স
গেজেট। এটি পরিচালনার জন্য ইলেকট্রিক ইন্সট্রুমেন্টের প্রয়োজন হয়। ড্রোন কে একটি
জয়স্টিক ও জিপিএস এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ইউজার ফ্রেন্ডলি ব্যবহার করতে এর
মধ্যে বেশ কিছু ইন্টারফেস যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া আরো বেশ কিছু গেজেট লাগানো হয় । যথা-ক্যামেরা, পাখা, ব্যাটারি,
রোটর্স ইত্যাদি। ড্রোন পরিচালানোর জন্যে পূর্বেই
ব্যাটারিকে চার্জ করে জয়স্টিকের সাথে ড্রোন কানেক্ট করে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।
ড্রোনের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান গুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নরূপ : -
*) কানেক্টিভিটি : -
ড্রোন কে দূর থেকে নিয়ন্ত্রণের জন্য ওয়ারলেস কানেক্টিভিটির প্রয়োজন
হয়। জয়স্টিক ও ড্রোনের সাথে প্রথমেই কানেক্টিভিটি সংযুক্ত করা হয়। তারপর ড্রোন
উড়িয়ে দিয়ে কন্ট্রোল করা হয়। অনেকে এটি কে মোবাইল বা কম্পিউটা ডিভাইসের সাথে যুক্ত
করে পরিচালনা করে। ব্যবহার কারীর সুবিধা অনুযায়ী যেকোন ডিভাইসের সাথে যুক্ত করতে পারবে।
*) রোটর্স :-
ড্রোনকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একটি রোটর্স লাগানো হয়। এ রোটর্স মোটরের সাথে যুক্ত হয়ে থাকে। মূলত দিক পরিবর্তনের
জন্য রোটর্সকে ওয়ারলেস কানেকশনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয় । মোটরের সাথে ঘড়ির
কাটার মত ৪ টি বা তার অধিক পাখা সংযুক্ত করা হয় । এই পাখাগুলোই ড্রোনকে শূন্যে ভাসিয়ে
রাখতে সাহায্য করে ।
*) অ্যাক্সলোমিটার : -
এ ফিচারটির মাধ্যমেই ড্রোন তার গতি সম্পর্কিত তথ্য ও কতটুকু উচ্চতায়
রয়াছে তার ধারণা দেয়। একই সাথে ব্যাটারির চার্জ কি পরিমান আছে তার সংকেতও প্রদান করে
থাকে। এমনকি এর অভ্যন্তরীণ যন্ত্রগুলোসহ নিরাপদে মাটিতে অবতরণে সহায়তা করে।
*) ক্যামেরা : -
ড্রোনে কোনো মানুষ বা পাইলট থাকে না। ওয়ারলেস কানেকশনের মাধ্যমে
একজন নিয়ন্ত্রক এটিকে পরিচালনা করে। ড্রোনে
যুক্ত থাকা ক্যামেরা দিয়ে ব্যবহারকারী
চারদিকের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে নিয়ন্ত্রণ
করতে পারে।
ড্রোনের প্রকারভেদ : -
ড্রোন যে প্রক্রিয়ায়
কাজ করে তার নাম UAV(Unmanned aerial vehicle)এর ব্যবহার অনুসারে সাধারণত দুই ভাগ:
-
১) সাধারণ ইউএভি :-
সাধারণ UAV ড্রোন গুলোতে
একটি ক্যামেরা, উড়ার জন্য পাখা,এবং কিছু সেন্সর থাকে।
২)সামরিক ইউএভি :-
সামরিক UAV ড্রোনে বিশেষ
ধরনের সুবিধা থাকে যেমন ককপিট,স্পাই ক্যামেরা,লেজার, জিপিএস,লাইটিং ইত্যাদি।
আপনি যদি ড্রোন কিনতে আগ্রহী
হন আপনার সামর্থ্যের মধ্যে থাকা দশটি সেরা ড্রোন নিম্নে উল্লেখ করা হল: -
সেরা ১০ টি ড্রোন : -
1) DJI Mavic Air 2
2) DJI Mavic 2 Pro
3) DJ Mini 2
4) DJI Mavic 2 Zoom
5) DJI Mavic Mini
6) Ryze Tello
7) DJI phantom 4 pro V20
8) powervision powerEgg x
9) parrot Anafi
10) DJI Mavic pro
ড্রোনের ব্যবহার সমুহ :
-
সর্বপ্রথম ড্রোন ব্যবহার করা হয় সামরিক/সেনাবাহীনির শত্রু পক্ষের
অবস্থান পর্যবেক্ষণ, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ,
আক্রমণ পরিচালনার কাজে। প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে এখন কর্মক্ষেত্র থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত
কাজেও ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে। ড্রোনের ব্যবহার সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা
হলো:
বোমা সনাক্তকরণ : -
শুরু থেকেই সামরিক বিভিন্ন কাজের জন্যে ড্রোন ব্যবহার হয়ে আসছে।
ড্রোনের সাহায্যে শতভাগ নিরাপদে শনাক্তকরণ ও উদ্ধার করা সম্ভব হয়। কোন মানুষের যেখানে
প্রবেশ করা অসম্ভব, সেখানে ড্রোন প্রবেশ করে সহজে
বোমা বের করে আনতে সক্ষম হয়।
নজরদারি : -
সামরিক কাজে এবং গুরুত্বপূর্ণ এলাকাতে নজরদারি করতে ড্রোন ব্যবহার
করা হয়। এতে সামরিক কায়িক শ্রম কমে হচ্ছে। সেই সাথে মৃত্যুর ঝুঁকিও কমে থাকছে।
কারণ বিপদজনক এলাকাতে স্ব-শরীরে নজরদারি করতে গেলে প্রাণ সংশয়ের সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু
ড্রোনের মাধ্যমে সহজে দূরবর্তী স্থান থেকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পর্যবেক্ষণ করা যায়।
ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যবহার
: -
ড্রোনের মাধ্যমে মুভিতে
বর্তমানে অনেক উপর থেকে ভিডিও শুট করা যায়,যা
পূর্বে হেলিকপ্টারের মাধ্যমে করা হতো। এতে করে উপর থেকে ভিডিও করা
শহজ হয়ে গিয়েছে । অধিকাংশ লাইভ খেলাগুলোতেও
এখন ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে। ড্রোন ব্যবহারের কারণে ফিল্ম তৈরিতে এখন ব্যয় অনেক কমে
গেছে।
হোম ডেলিভারির কাজে :
-
ড্রোন এখন হোম ডেলিভারির কাজে ব্যবহার হচ্ছে। বিশেষ করে বিভিন্ন
বাড়িতে খাবার ডেলিভারিতে এটি বহুল ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়াও ই-কমার্স বিজনেসে প্রোডাক্ট
শিপিং এর কাজ করানো হয় ড্রোনের মাধ্যমে। এতে করে কম খরচে দ্রুত শিপিং করা যায়।
উদ্ধার কাজ ও স্বাস্থ্যসেবা
: -
প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা
কৃত্রিম দুর্যোগের কারণে দুর্গম এলাকায় অনেক সময় মানুষ-জন আটকে যায়। মানুষের তুলনায় সেখানে ড্রোন দ্রুত পৌঁছাতে সক্ষম
হয়। সে সকল দুর্গম এলাকায় ড্রোনের মাধ্যমে খাবার এবং ঔষধ পাঠানো সম্ভব হচ্ছে। যার
ফলে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার অনেকটা কমে গেছে।
বর্তমানে ড্রোন আরও অনেক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। কায়িক পরিশ্রম
কমে যাওয়ার কারনে, বেকারত্বের হার কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে। আধুনিক প্রযুক্তি মানব
সমাজের জন্য আল্লাহর রহমত স্বরুপ।তাই ড্রোন সহ সকল প্রযুক্তিকে ভালো কাজে ব্যবহার করা
প্রয়োজন।
পোস্ট ট্যাগ -
1,000 টাকার ড্রোন, শিক্ষা ড্রোন কি, ড্রোনের দাম কত, ড্রোন কিভাবে
উড়ে, ড্রোন ক্যামেরা পিক, ড্রোন ক্যামেরা দাম কত