অনন্ত জীবনের
সফলতা ও ব্যর্থতা নির্ধারণের জন্যেই মহান আল্লাহ মানুষকে দুনিয়ার জীবনের সময়টুকু
গনিমত হিসেবে দিয়েছেন। জ্ঞানীরা সময় কে কাজে লাগিয়ে পুরস্কার ও সফলতা নিশ্চিত করে।
আর অজ্ঞ, মূর্খ, জাহেলরা দুনিয়ার জীবনকে হাসি-তামাশা ও রঙ্গ লীলায় মত্ত হয়ে ধ্বংস
করে নিজের জীবনকে। কালামে হাকিমে বর্ণিত,
মানুষের মৃত্যুর
পর ৯টি আকাঙ্খা বা আফসোসের চিত্র নিন্মরুপ :-
১)"হায়! আমি যদি মাটি হয়ে যেতাম।"
اِنَّاۤ
اَنۡذَرۡنٰكُمۡ عَذَابًا قَرِيۡبًا ۖۚ يَّوۡمَ
يَنۡظُرُ الۡمَرۡءُ مَا قَدَّمَتۡ يَدٰهُ
وَيَقُوۡلُ الۡكٰفِرُ يٰلَيۡتَنِىۡ كُنۡتُ تُرٰبًا
যে আযাবটি কাছে
এসে গেছে সে সম্পর্কে আমি তোমাদের সতর্ক করে দিলাম। যেদিন মানুষ সেসব কিছুই দেখবে যা
তার দু’টি হাত আগেই পাঠিয়ে দিয়েছে এবং কাফের বলে উঠবে, হায়! আমি যদি মাটি যেতাম।
(সূরাহ নাবা, আয়াত : ৪০)
২) "হায়! আমি যদি পরকালের জন্য কিছু করতাম।"
﴿ يَقُوۡلُ يٰلَيۡتَنِىۡ
قَدَّمۡتُ لِحَيَاتِىۚ﴾
সেদিন মানুষ বুঝবে
কিন্তু তার বুঝতে পারায় কী লাভ?সে বলবে, হায়, যদি আমি নিজের জীবনের জন্য কিছু আগাম
ব্যবস্থা করতাম!
(সূরাহ ফজর, আয়াত
: ২৪)
৩)"হায়! আমাকে যদি আমার আমলনামা না দেওয়া
হতো।"
﴿ وَاَمَّا مَنۡ
اُوۡتِىَ كِتٰبَهٗ بِشِمَالِهٖ ۙ فَيَقُوۡلُ يٰلَيۡتَنِىۡ
لَمۡ اُوۡتَ كِتٰبِيَهۡ﴾
আর যার আমলনামা তার বাঁ হাতে দেয়া হবে, সে বলবেঃ
হায়! আমার আমলনামা যদি আমাকে আদৌ দেয়া না হতো!
(সূরাহ আল-হাক্কা, আয়াত : ২৫)
৪) "হায়! আমি যদি ওকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না
করতাম।"
يٰوَيۡلَتٰى لَيۡتَنِىۡ لَمۡ اَتَّخِذۡ فُلَانًا
خَلِيۡلاً﴾
হায়! আমার দুর্ভাগ্য,
হায়! যদি আমি অমুক লোককে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ না করতাম!
(সূরাহ ফুরকান,
আয়াত : ২৮)
৫)"হায়! আমরা যদি আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল
ﷺ
এর আনুগত্য করতাম।"
يَوۡمَ
تُقَلَّبُ وُجُوۡهُهُمۡ فِىۡ النَّارِ يَقُوۡلُوۡنَ
يٰلَيۡتَنَاۤ اَطَعۡنَا اللّٰهَ وَاَطَعۡنَا الرَّسُوۡلَا﴾
যেদিন তাদের চেহারা
আগুনে ওলট পালট করা হবে তখন তারা বলবে “হায়! যদি আমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য
করতাম।”
(সূরা আহযাব,
আয়াত : ৬৬)
৬)"হায়! আমি যদি রাসূল ﷺ
এর পথ অবলম্বন করতাম।"
وَيَوۡمَ
يَعَضُّ الظَّالِمُ عَلٰى يَدَيۡهِ يَقُوۡلُ
يٰلَيۡتَنِىۡ اتَّخَذۡتُ مَعَ الرَّسُوۡلِ سَبِيۡلاً﴾
"জালেমরা
সেদিন নিজেদের হাত কামড়াতে থাকবে এবং বলতে থাকবে, “হায়! যদি আমি রসুলের সহযোগী হতাম!"
(সূরাহ ফুরকান,
আয়াত : ২৭)
৭)"হায়! আমিও যদি তাদের সঙ্গে থাকতাম, তা
হলে বিরাট সফলতা লাভ করতে পারতাম।"
﴿ وَلَٮِٕنۡ اَصَابَكُمۡ
فَضۡلٌ مِّنَ اللّٰهِ لَيَقُوۡلَنَّ
كَاَنۡ لَّمۡ تَكُنۡۢ بَيۡنَكُمۡ
وَبَيۡنَهٗ مَوَدَّةٌ يّٰلَيۡتَنِىۡ كُنۡتُ مَعَهُمۡ فَاَفُوۡزَ
فَوۡزًا عَظِيۡمًا﴾
আর যদি আল্লাহর
পক্ষ থেকে তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করা হয়, তাহলে সে, এমনভাবে বলে যেন তোমাদের ও তার
মধ্যে কোন প্রীতির সম্পর্ক ছিলই না,-হায়! যদি আমিও তাদের সাথে হতাম তাহলে বিরাট সাফল্য
লাভ করতাম।
(সূরাহ আন-নিসা, আয়াত : ৭৩)
৮)"হায়! আমি যদি আমার রবের সঙ্গে কাউকে
শরীক না করতাম।"
﴿وَأُحِيطَ بِثَمَرِهِ فَأَصْبَحَ يُقَلِّبُ كَفَّيْهِ عَلَىٰ مَا أَنفَقَ
فِيهَا وَهِيَ خَاوِيَةٌ عَلَىٰ
عُرُوشِهَا وَيَقُولُ يَا لَيْتَنِي لَمْ
أُشْرِكْ بِرَبِّي أَحَدًا﴾
শেষ পর্যন্ত তার
সমস্ত ফসল বিনষ্ট হলো এবং সে নিজের আংগুর বাগান মাচানের ওপর লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়ে থাকতে
দেখে নিজের নিয়োজিত পুঁজির জন্য আফসোস করতে থাকলো এবং বলতে লাগলো, “হায়! যদি আমি আমার
রবের সাথে কাউকে শরীক না করতাম”!
(সূরা কাহফ, আয়াত
: ৪২)
৯)"হায়! এমন যদি কোনো সুরত হতো -
আমাদেরকে যদি আবার দুনিয়াতে পাঠানো হতো, আমরা আমাদের প্রভুকে
মিথ্যা প্রতিপন্ন না করতাম আর আমরা হতাম ঈমানদারদের মধ্যে শামিল।"
দুনিয়ার সফলতার ভাবনায় যারা মগ্ন তাদের জন্য পবিত্র কুরআনে
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘পার্থিব জীবনে চাকচিক্যের প্রতি অনুরাগ মানুষকে ক্ষীণদৃষ্টিসম্পন্ন
করে ফেলে। এ কারণে পরকাল সম্পর্কে জানার সৌভাগ্য তাদের হয় না। তারা শুধু দুনিয়ার জ্ঞানেই
জ্ঞানী, ﴿ يَعۡلَمُوۡنَ ظَاهِرًا
مِّنَ الۡحَيٰوةِ الدُّنۡيَا ۖۚ وَهُمۡ
عَنِ الۡاٰخِرَةِ هُمۡ غٰفِلُوۡنَ﴾
লোকেরা দুনিয়ায়
কেবল বাহ্যিক দিকটাই জানে এবং আখেরাত থেকে তারা নিজেরাই গাফেল।
(সূরা আর-রুম,
আয়াত-৭)।
প্রত্যক মুসলিম
নর-নারীর সবচেয়ে বড় সফলতা ও মানদণ্ড হচ্ছে মহান আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করা এবং রাসূলের
আদর্শে আদর্শবান হওয়া। কুরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন,"আর যে কেউ আল্লাহ ও
তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে এবং তাঁর তাকওয়া অবলম্বন করে, তারাই কৃতকার্য"।
﴿وَمَنۡ يُّطِعِ اللّٰهَ
وَرَسُوۡلَهٗ وَيَخۡشَ اللّٰهَ وَيَتَّقۡهِ فَاُولٰٓٮِٕكَ
هُمُ الۡفَآٮِٕزُوۡنَ﴾
আর সফলকাম তারাই যারা আল্লাহ ও রসূলের হুকুম মেনে
চলে ও আল্লাহকে ভয় করে এবং তাঁর নাফরমানী করা থেকে দূরে থাকে।
(সূরা নূর, আয়াত-৫২)।
দুনিয়ারটা খুবই
মায়াবিনী এবং অল্প সময়ের ক্ষণস্থায়ী একটা জীবন। এ জীবন পাড়ি দিয়েই যেতে হবে চিরস্থায়ী
জীবনে। কেউ অবর্ণনীয় শাস্তির জাহান্নামে আবার কেউ সাজসজ্জায় সজ্জিত সুন্দর পরম সুখের জান্নাতে। এই মায়াবিনী দুনিয়াতে সফলতা জয় না করে মহান আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার ভালোবাসায় নিজেকে
জয় করুন। এটাই হবে একজন মুমিনের জীবনের সবচেয়ে
বড় সফলতা।
উপসংহার :-
দুনিয়াটা হক-বাতিল,সত্য
- মিথ্যা, ধনী-দরিদ্র, সুখ- দুঃখ,হাসি -কান্না,সফলতা- ব্যর্থতা ও লোভে- লালসার এক মরীচিকাময়
জীবন। এটাই চিরসত্য ও বাস্তবতা। অতএব প্রতিটি মানুষের উচিৎ সময় নষ্ট না করে, চেতনা
জাগ্রত রেখে, সময়কে কাজে লাগিয়ে নিজেকে অনন্ত জীবনের সফলতার জন্য প্রস্তুত করা। সূরা
আসর থেকে শিক্ষা নিয়ে বরফ খন্ডের মতো গলে গলে নিঃশেষ হয়ে যাওয়া জীবনকে আল্লাহর ভালোবাসা
ও রাসুলের(সা.) পথে পরিচালনা করে সফলতায় উন্নীত করা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে ব্যর্থতা
ও আফসোসের জীবন নয় বরং সফলতার জীবন দান করুন। আমীন।
পোস্ট ট্যাগ -
আফসোস নিয়ে উক্তি,
সারারাত নফল ইবাদত অপেক্ষা অধিক উত্তম কোন কাজ, আফসোস meaning in English, মৃত্যুর
পর মানুষ যে ৯টি বিষয়ে আফসোস করবে