ঈদে মিলাদুন্নবীর ঈদ।"
কিছু কিছু বিষয়ে আমাদের কৌতুহলের শেষ নেই। আমাদের মনে কমন কিছু প্রশ্ন দেখা দেয় আর সেই প্রশ্নের সঠিক উত্তর খুজতে খুজতে আমরা ক্লান্ত। সচারাচর যে প্রশ্নগুলি আমাদের মনে জাগে আর তা হলো -
ডেঙ্গু জ্বর রোধে করণীয় কি ?
ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে আসলে বাস্তবতা কি? ইসলামে ঈদে মিলাদ বলতে কিছু আছে কি? ইসলাম ধর্মে ঈদ কয়টি? নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম তারিখ কি ১২ রবিউল আউয়াল? নিশ্চিত ও সর্ব সম্মতভাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাত দিবস কি ১২ রবিউল আউয়াল নয়? যে দিনে রাসুলে করিম (সা) ইন্তেকাল করলেন,শোকের ছায়া নেমে এলো সারা পৃথিবী জুড়ে, সকল সাহাবীরা মন ভেঙ্গে বসে পড়লেন, সে দিনে আনন্দ উৎসব করা নবিপ্রেমিক কোন মুসলমানের কাজ হতে পারে? শরিয়তের দৃষ্টিতে ঈদে মিলাদ পালন করা কি বৈধ? বিধর্মীদের অনুকরণে মুসলিমরা সামাজে কিভাবে জন্ম-মৃত্যু দিবস পালন করে?
আল্লামা শিবলী নোমানী ও সাইয়েদ সুলাইমান নদভী (রহ) এর সাড়া-জাগানো
সিরাত-গ্রন্থ ‘সিরাতুন্নবি’। এ গ্রন্থে উল্লেখ
রয়েছে, "নবি করিম (সা) এর জন্ম দিবস সম্পর্কে মিশরের প্রখ্যাত জোতির্বিজ্ঞানী
মাহমূদ পাশা একটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। এতে
তিনি প্রমাণ করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা) এর জন্ম ৯ রবিউল আউয়াল রোজ সোমবার, মোতাবেক ২০ এপ্রিল
৫৭১ খৃস্টাব্দ।
আল্লাহর রাসুল (সা) সহিহ
হাদিসে নিজেই বলেছেন তার জন্ম সোমবার দিন হয়েছে। মাহমুদ পাশা গবেষণা ও হিসাব করে দেখিয়েছেন,
সে বছর ১২ রবিউল আউয়ালের দিন টি সোমবার ছিল না, ছিল বৃহস্পতিবার। আর সোমবার ছিল ৯ রবিউল
আউয়াল।
তাই নিশ্চিত বলা যায়, জন্ম তারিখ নিয়ে অতীতে যে অস্পষ্টতা ছিল বর্তমানে
তা আর নেই। মাহমুদ পাশার গবেষণা প্রকাশিত হওয়ার পর সকল স্কলারই তা গ্রহণ করেছেন এবং
কেউ তার প্রমাণ খণ্ডন করতে সক্ষম হয়নি ।তাই নবি করিম (সা) এর জন্ম দিবস হল ৯ রবিউল আউয়াল,১২ রবিউল আউয়াল নয়।
আবার সর্বসম্মতভাবে তাঁর ইন্তেকাল দিবস হল ১২ রবিউল আউয়াল।
দুঃখজনক হলেও সত্য যে দিনটিকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লামের বার্থডে হিসেবে পালন করা হয় সেটি মূলত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইটি ওয়াসাল্লামের
জন্ম দিবস নয়, বরং মৃত্যু দিবস। তাই দিনটিকে "ঈদ" হিসেবে
পালন করার কোন যৌক্তি থাকতে পারে না
২. ইসলামে অগণিত নবি-রাসুল
, তারপরে খুলাফায়ে রাশেদিন ও অসংখ্য সাহাবা, মনীষী, আওলিয়ায়ে কেরাম জন্ম গ্রহণ করেছেন
এবং ইন্তেকাল করেছেন। যদি তাদের জন্ম বা মৃত্যু দিবস পালন ইসলাম-সমর্থিত বা সওয়াবের
কাজ হত তাহলে বছরব্যাপী জন্ম-মৃত্যু দিবস পালনের ঘূর্ণাবর্তে আবদ্ধ হয়ে যেতে মুসলিম
উম্মাহ।
৩. রাসুলুল্লাহ (সা) এর
জন্মদিন পালনের প্রস্তাব সাহাবায়ে কেরাম রাজিয়াল্লাহু আনহুম কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।
যেমন হিজরি ক্যালেন্ডার প্রবর্তনের সময় হযরত উমর রাজিয়াল্লাহু আনহু সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে
পরামর্শ বৈঠকে বসলেন। কোন এক স্মরণীয় ঘটনার
দিন থেকে একটি নতুন বর্ষগণনা পদ্ধতি প্রবর্তন
করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। কেউ কেউ প্রস্তাব দিয়েছিলেন রাসুলুল্লাহ (সা) এর জন্ম
তারিখ থেকে সন গণনা শুরু করতে।কিন্তু উমর (রা) এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে দিয়ে বললেন,
এ পদ্ধতি খৃস্টানদের। উমর (রা) এর সিদ্ধান্তের
সাথে সকল সাহাবায়ে কেরাম একমত পোষণ করে রাসুলে করিম (সা) এর হিজরতের দিন থেকেই ইসলামি সন গণনা শুরু করলেন।
৪. রাসুলুল্লাহর (সা) সাহাবায়ে আজমাইন ছিলেন সত্যিকারার্থে নবিপ্রেমিক ও সর্বোত্তম অনুসারী।জীবন
দিয়ে হলেও নবিপ্রেমের দৃষ্টান্ত তারাই স্থাপন
করেছিলেন। খোলাফায়ে রাশিদিন, সাহাবায়ে কেরাম,তাবেঈন, তাবে তাবেঈনদেট কেউই নবি করিম (সা)
এর জন্মদিনে ঈদ বা অনুষ্ঠান পালন করেননি। এটা করা যদি সাওয়াব ও মহব্বতের পরিচায়ক হত তবে তারা তা অবশ্যই করতেন।
বার্থডে পালন করার কালচার সম্পর্কে তাদেরও ধারণা ছিল। তাদের সামনেই তো খৃস্টানরা ঈসা
আলাইহিস সালাম-এর জন্মদিন ( বড়দিন) উদযাপন করত।কিন্তু বার্থডে পালনের কোন বিধান ইসলামে
নেই।
৫. মিলাদ বা বার্থডে উৎসব-অনুষ্ঠান
পালন করা খৃস্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও অন্যান্য
অমুসলিমদের ধর্মীয় রীতি। বড় দিন, জন্মাষ্ঠমী, বৌদ্ধ পূর্ণিমা ইত্যাদি অমুসলিমদেরই কালচার
। মুসলিমদের জন্য তা সর্ব অবস্থায়ই পরিত্যাজ্য।
বিধর্মীদের ধর্মীয় রীতি-নীতি, আচার-অনুষ্ঠান যতই চাকচিক্যময় হোক তা গ্রহণ করা মুসলিমদের জন্য জায়েজ নয়।
খ) আজান প্রচলনের ঘটনায় রাসুলুল্লাহ (সা) আগুন জ্বালনো,ঘন্টার
ধ্বনি বাজানো,বাঁশি বাজানোর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান
করে সালাতের জন্য আজানের প্রচলন করলেন। এবং বললেন, "আগুন জ্বালানো হল অগ্নিপুজারীদের
রীতি। ঘণ্টা বাজানো খৃস্টানদের ও বাঁশী বাজানো ইহুদীদের রীতি"।
গ) আশুরার দিনে মদিনার ইহুদীরা একটি রোযা পালন করত। রাসূলুল্লাহ (সা) দুটি
রোযা রাখতে নির্দেশ দিলেন, যাতে তাদের সাথে সাদৃশ্যতা না হয়।
ইসলামের ঈদ :-
ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা
এ দুটি দ্বীনিই মুসলমানদের উৎসবের দিন।
আনাস বিন মালিক (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলে কারিম (সা) মদিনায় এসে
দেখলেন বছরের দুটি দিনে মদিনাবাসী আনন্দ-ফুর্তি করছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন এ
দিন দুটো কি? উত্তরে তারা বলল, আমরা ইসলামপূর্ব মূর্খতার যুগে এ দুদিন আনন্দ-ফুর্তি
করতাম। রাসুলুল্লাহ (সা) বললেন- আল্লাহ তায়ালা এ দুদিনের পরিবর্তে এর চেয়ে উত্তম দুটো
দিন তোমাদের দিয়েছেন। তা হল ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতর। (আবু দাউদ) ইসলামে ঈদ শুধু দুটি।
এ বিষয়টি শুধু সহিহ হাদিস দ্বারাই প্রমাণিত নয়, তা রবং ইজমায়ে উম্মত দ্বারাও প্রতিষ্ঠিত।
এখন যদি কেউ ইসলামে তৃতীয়
আরেকটি ঈদের প্রচলন করে তবে তা কখনো গ্রহণযোগ্য
হবে না। বরং তা দীনের মধ্যে আরেকটা বেদআত ও
বিকৃতি বলেই গণ্য হবে। যদি কেউ বলে,
"সকল ঈদের সেরা ঈদ- ঈদে মিলাদুন্নবী তখন
স্বাভাবিক ভাবেই এর অর্থ হয় ইসলামের ঈদ হচ্ছে তিনটি ।এটা কিভাবে
সম্ভব? যে ঈদকে আল্লাহ ও তার রাসুলের(সা.), সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়িন ও ইমামগণ
দ্বারা প্রত্যাখ্যাত তা ইসলামে শ্রেষ্ঠ ঈদ
বলে বিবেচিত হতে পারে কিভাবে?রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তেকাল দিবসে ঈদ পালন করা ধৃষ্ঠতা ও বেয়াদবি।
১২ রবিউল আউয়ালে ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন করা শরিয়তবিরোধী ও গুনাহের
কাজ। এ ধরনের কাজ হতে নিজেদের বাঁচাতে হবে এবং সমাজের সকলকে বিরত রাখার চেষ্টা করতে হবে।
রাসূলুল্লাহ সা. বলেন,
“আমাদের ধর্মে যে নতুন কোন বিষয় প্রচলন করল তা প্রত্যাখ্যাত হবে। ” (বুখারি ও মুসলিম)।
তিনি আরো ইরশাদ করেন, “সাবধান ! ধর্মে প্রবর্তিত নতুন বিষয় থেকে সর্বদা বিরত থাকবে। কেননা নব-প্রবর্তির্ত প্রতিটি বিষয় হল বেদআত
এবং প্রতিটি বেদআত হল পথভ্রষ্ঠতা”।(আবু দাউদ,
তিরমিজী,ইবনে মাজা, মুসনাদে আহমাদ)।
ঈদে মিলাদুন্নবি পালন খৃস্টানদের
বড় দিন, হিন্দুদের জন্মাষ্ঠমী ও বৌদ্ধদের বৌদ্ধ-পূর্ণিমার অনুকরণ মাত্র। ধর্মীয় বিষয়ে
তাদের আচার-অনুষ্ঠান অর্জন করা ঈমানের দাবি।
ঈদে মিলাদ পালনের মাধ্যমে তাদের অনুসরণ করা হয়।যা ইসলামি শরীয়তে অগ্রহণ যোগ্য।
সর্বসম্মতভাবে ১২ রবিউল আউয়াল নবি আকরাম (সা) এর ইন্তেকাল দিবস। এ বিষয়ে কারো দ্বিমত ও কোন সন্দেহ নেই। এ দিনে মুসলিম উম্মাহ
ও সাহাবায়ে আজমাইন আল্লাহর রাসুলের (সা) ইন্তেকালের শোকে পাথর হয়ে হয়ে গিয়েছিলেন। এসব জেনেও
যারা এ দিনটিতে ঈদ বা আনন্দ-উৎসব পালন করে তারা
চরম বেঈমানি ও নবির শানে বেয়াদবি করে।
মিলাদুন্নবি পালন না করে রাসুলে কারিম (সা) এর সিরাত ও আদর্শ জেনে
বুঝে পালন করা অপরিহার্য কর্তব্য । আল্লাহ ও তার রাসুল (সা) কর্তৃক নির্ধারিত ইসলামের
দু’ ঈদের সাথে তৃতীয় আরেকটি ঈদ সংযোজন করা ইসলাম-ধর্ম বিকৃত করার এক অপচেষ্টা।